ঢাকা, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৬ চৈত্র ১৪৩১

জেনেনিন কোন কোন সম্পদের যাকাত দিতে হয় না

২০২৫ মার্চ ২৮ ১৯:১৮:৩৩
জেনেনিন কোন কোন সম্পদের যাকাত দিতে হয় না

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাকাত ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ, যার মাধ্যমে মুসলমানদের নিজেদের সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট অংশ গরীব-দুঃখী ও সমাজের প্রয়োজনীয়দের মধ্যে বিতরণ করা হয়। তবে সব ধরনের সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ নয়। এখানে এমন কিছু সম্পদের তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলোর ওপর জাকাত দিতে হয় না।

১. কৃষিবহির্ভূত জমি: কৃষি কাজে ব্যবহার না করা জমি।

২. দালানকোঠা: গৃহ বা কলকারখানা, দোকান হিসেবে ব্যবহৃত ভবনগুলোতে জাকাত ফরজ নয়।

৩. দোকানপাট: ব্যবসার জন্য ব্যবহৃত দোকান, দোকানে থাকা আলমারি বা অন্যান্য সহায়ক সরঞ্জাম।

৪. বসতবাড়ি বা বাসস্থান: যে সম্পদ বসবাসের উদ্দেশ্যে রাখা হয়, তাতে জাকাত ফরজ নয়।

৫. ব্যক্তিগত পোশাক বা বস্ত্র: পোষাক বা অন্যান্য ব্যক্তিগত ব্যবহার্য কাপড়, যেমন নারী বা পুরুষের পোশাক, যেগুলো ব্যক্তিগত ব্যবহার ছাড়া কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হয় না।

৬. গৃহস্থালির জিনিসপত্র: হাঁড়িপাতিল, বাসনপত্র, আসবাবপত্র, যেগুলো বাসার প্রয়োজনীয় ও দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয়।

৭. শিক্ষা উপকরণ: বই, পত্রিকা, খাতা বা যেকোনো মুদ্রিত সামগ্রী, যেগুলো শিক্ষা বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।

৮. অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ: যুদ্ধ বা নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত অস্ত্র, যেগুলোর ওপর জাকাত আদায় করা হয় না।

৯. ব্যাংকঋণ বা ধারকৃত টাকা: ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়া অর্থের ওপর জাকাত ফরজ নয়।

১০. পোষাপাখি বা হাঁস-মুরগি: পোষ্য প্রাণী, যেমন হাঁস, মুরগি, কুকুর, ইত্যাদির ওপর জাকাত ফরজ নয়।

১১. সরকারি সম্পত্তি: সরকারের হাতে থাকা সম্পত্তি, যার ওপর জাকাত ফরজ নয়।

১২. জন্মগত উদ্ভিদ: এমন উদ্ভিদ, যেগুলোর জন্মে মানুষের কোনো পরিশ্রম নেই, যেমন বনজ বৃক্ষ, ঘাস বা নলখাগড়া, সেগুলোর ওপরও জাকাত নেই।

১৩. ব্যক্তিগত যানবাহন: গৃহস্থালির ব্যবহৃত সাইকেল, মোটরসাইকেল বা গাড়ি ইত্যাদি, যেগুলো দৈনন্দিন চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হয়, এগুলোর ওপর জাকাত ফরজ নয়।

১৪. গরু-মহিষ ও অন্যান্য পশু: যে গবাদি পশু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়, বরং দুধ উৎপাদন বা অন্যান্য কাজের জন্য রাখা হয়, সেগুলোর ওপর জাকাত ফরজ নয়।

১৫. মুল্যবান রত্নপাথর বা সামুদ্রিক দ্রব্য: মোতি, ইয়াকুত, মণিমুক্তা বা অন্যান্য মূল্যবান পাথরের ওপরও জাকাত ফরজ নয়, যদি সেগুলো ব্যবসার জন্য ব্যবহার না হয়।

উল্লেখযোগ্য অন্যান্য বিষয়:

ওয়াকফকৃত সম্পত্তি: দাতব্য কাজে দান করা সম্পত্তি, যা বিশেষ কোনো ব্যক্তির মালিকানাধীন নয়, সেগুলোর ওপরও জাকাত ধার্য হবে না।

গরীবদের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা: মানুষের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য রক্ষিত অর্থ, যেমন খাদ্য, চিকিৎসা বা শিক্ষার জন্য সঞ্চিত টাকা, এর ওপর জাকাত দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

ধারকৃত পণ্য: যেসব সামগ্রী ব্যবসার জন্য নয়, যেমন ব্যাংকঋণ, বাণিজ্যিক ঋণ ইত্যাদি, তাদের ওপরও জাকাত দেওয়া হবে না।

এভাবে জাকাতের নিয়মানুযায়ী, ইসলামে বিভিন্ন ধরনের সম্পদের ওপর ফরজ হওয়া ও না হওয়া নির্ধারিত রয়েছে। এর মাধ্যমে ইসলামি সমাজে সঠিক বিতরণ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে চায়, যেখানে গরীবদের জন্য সাহায্য পৌঁছে দেওয়া যায়, আর ধনী ও গরীবের মাঝে সামঞ্জস্য রক্ষা হয়।

এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা, যা আমাদের সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে সহায়তা করবে।

সামিরা বিনতে সাবা/

ধর্ম - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ