ঢাকা, রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫, ১৬ চৈত্র ১৪৩১

টাকা পাচারের অভিযোগে ৮ আ.লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গ্রুপের নাম ফাঁস

২০২৫ মার্চ ২৮ ১০:০৯:৫৮
টাকা পাচারের অভিযোগে ৮ আ.লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গ্রুপের নাম ফাঁস

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচারের ভয়াবহ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে, যা ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ ৮টি বৃহৎ ব্যবসায়ী গ্রুপের মাধ্যমে বিদেশে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। দেশি-বিদেশি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই লুটের টাকার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তোলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সাইপ্রাস, কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, আইল অব ম্যানসহ নানা দেশে এসব অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে।

কোন গ্রুপগুলো টাকা পাচারে জড়িত?

বিশ্বের নানা দেশে গোপনে বিশাল সম্পদ গড়ে তোলা এই ব্যবসায়িক গ্রুপগুলো হলো:

সামিট গ্রুপ, জেমকম গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, আরামিট গ্রুপ, নাসা গ্রুপ ও বেক্সিমকো গ্রুপ

দেশের টাকা বিদেশে, লুটের অর্থে সাম্রাজ্য

বাংলাদেশের জনগণের অর্থে সৃষ্ট এই সম্পদ দেশ থেকে পাচার হয়ে বিদেশের বিলাসবহুল নগরীতে বিশাল ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু এর বিনিময়ে দেশকে কিছুই ফেরত দেওয়া হয়নি। বরং এই গ্রুপগুলোর মালিকরা বিদেশে নাগরিকত্ব গ্রহণ করে নিজেদের আর্থিক সাম্রাজ্যকে আরও সুসংহত করেছেন।

গোয়েন্দা তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য

দেশের ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তদন্তে উঠে এসেছে, এসব অর্থ ব্যাংক লুট, সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ ও রাজস্ব ফাঁকির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি গ্রুপের বিরুদ্ধে পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে, যার ব্যাপারে গভীর তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

প্রতিটি গ্রুপের বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগ

???? সামিট গ্রুপ: বিদ্যুৎ ও বন্দর খাতে সরকারি সুবিধা নিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছে। সিঙ্গাপুর ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে বিপুল সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।

???? জেমকম গ্রুপ: সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে, যা নিয়ে তদন্ত চলছে।

???? এস আলম গ্রুপ: ৯টি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সিঙ্গাপুর, সাইপ্রাস, কানাডা ও মালয়েশিয়ায় বিপুল বিনিয়োগের প্রমাণ মিলেছে। পাচারের টাকায় সিঙ্গাপুরে পাঁচ তারকা হোটেল গড়ে তোলা হয়েছে।

???? সিকদার গ্রুপ: আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে।

???? ওরিয়ন গ্রুপ: ইউরোপের আলবেনিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে গোপনে বিনিয়োগ করেছে।

???? আরামিট গ্রুপ ও নাসা গ্রুপ: ভূমিমন্ত্রীর মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের চারটি দেশে বিপুল সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। নাসা গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদারের নামে যুক্তরাজ্য, হংকং ও আইল অব ম্যানের সম্পদের তথ্য মিলেছে।

???? বেক্সিমকো গ্রুপ: আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার আড়ালে টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। লন্ডনে গ্রুপের মালিকপক্ষের বিলাসবহুল সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে।

পাচারকৃত সম্পদ উদ্ধারে আইনি উদ্যোগ

সরকার এই পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) তৈরি করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে এই অনুরোধ পাঠানো হবে, যাতে বিদেশে লুকিয়ে রাখা সম্পদ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হলে লুটের এই অর্থ দেশে ফেরত আসতে পারে।

জনগণের অর্থ যারা লুট করেছে, তাদের বিচার হবে কি? নাকি এই টাকা চিরদিনের জন্য বিদেশে রয়ে যাবে? এই প্রশ্ন এখন দেশবাসীর মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

রাজিব/

শেয়ার নিউজ - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ