ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

গ্যাস্ট্রিক নাকি হার্ট অ্যাটাক? ভুল বুঝলে হতে পারে মারাত্মক বিপদ!

লাইফস্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মার্চ ২৪ ২১:২৯:২৪
গ্যাস্ট্রিক নাকি হার্ট অ্যাটাক? ভুল বুঝলে হতে পারে মারাত্মক বিপদ!

নিজস্ব প্রতিবেদক: আমরা প্রায়ই শুনে থাকি, হৃদরোগ বয়স্কদের সমস্যা। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। তরুণরাও এখন হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে রয়েছেন, অনেক সময় যেটিকে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বলে ভুল করা হয়।

বাংলাদেশের ক্রিকেট তারকা তামিম ইকবালের ঘটনাই ধরুন। মাত্র ৩৭ বছর বয়সে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সোমবার সকালে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) ম্যাচে মাঠে নামার আগে হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন। প্রথমে ভেবেছিলেন, এটা হয়তো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। কিন্তু যখন ব্যথা না কমে বরং আরও বাড়তে থাকে, তখন হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, এটি সাধারণ গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নয়, বরং তার হৃদযন্ত্রে ব্লক সৃষ্টি হয়েছে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে দু'বার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। অবিলম্বে তার হার্টে রিং পরানো হয় এবং তিনি এখন পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। বিসিবির চিকিৎসকরা আশা করছেন, একদিনের মধ্যেই তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হবে।

যখন গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নয়, হার্ট অ্যাটাক!

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক তরুণই হৃদরোগের লক্ষণকে সাধারণ গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বলে ভুল করেন, ফলে চিকিৎসা নিতে দেরি হয়। বিশেষ করে বুকে চাপ অনুভব করা, অস্বস্তি লাগা, ঘাম হওয়া, মাথা ঘোরা বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে সেটাকে অবহেলা করা উচিত নয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ বছর বয়সের আশপাশেও অনেকেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

কেন কম বয়সেই বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি?

১. বংশগত কারণ: পরিবারের কারও যদি আগে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে, তাহলে তার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।

২. ডায়াবেটিস: এটি হৃদরোগের একটি বড় কারণ। ডায়াবেটিস থাকলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা দুই থেকে চার গুণ বেড়ে যায়।

৩. অতিরিক্ত ওজন: অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়ামের অভাবে তরুণদের মধ্যে ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে, যা হৃদরোগের জন্য অন্যতম প্রধান কারণ।

৪. উচ্চ রক্তচাপ: এটি ধীরে ধীরে হৃদপিণ্ডের ক্ষতি করে, রক্তনালিকে সংকীর্ণ করে এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ায়।

৫. ধূমপান ও ভেপিং: সিগারেটের পাশাপাশি ই-সিগারেট বা ভেপিংও হৃদরোগের অন্যতম কারণ হয়ে উঠছে। নিকোটিন ও অন্যান্য বিষাক্ত উপাদান হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে।

৬. অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: রাতজাগা, অনিয়ন্ত্রিত খাবার গ্রহণ, মানসিক চাপ, অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং মাদকাসক্তি হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কী করবেন?

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন

স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং পরিমিত পরিমাণে লবণ ও চর্বি গ্রহণ করুন

নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

ধূমপান ও ভেপিং থেকে দূরে থাকুন

পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন

উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়মিত পরীক্ষা করুন

সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন

হৃদরোগ শুধু বয়স্কদের সমস্যা নয়। আপনার বয়স যদি ত্রিশের আশপাশেও হয়, তবুও আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা মনে করে বুকে ব্যথাকে অবহেলা করবেন না। সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে জীবন রক্ষা করা সম্ভব। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।

আব্দুর রহিম/

লাইফ স্টাইল - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ