ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

MD. Razib Ali

Senior Reporter

মুখ দিয়ে ফেনা, ছিল না পালস, মৃত্যুর মুখ থেকে যেভাবে ফিরে এলেন তামিম

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মার্চ ২৪ ১৬:৩৮:৩২
মুখ দিয়ে ফেনা, ছিল না পালস, মৃত্যুর মুখ থেকে যেভাবে ফিরে এলেন তামিম

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল আজ (তারিখ) সকালে এক চরম সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন। সকালেও তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন, ম্যাচ শুরুর আগে প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়কের সঙ্গে টস করেন এবং টসের পর কিছুক্ষণ কথাও বলেন। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরই পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়।

হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তামিম

টসের পর ড্রেসিং রুমে ফেরার কিছুক্ষণ পর তামিম বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন। বিষয়টি প্রথমে সাধারণ মনে হলেও দ্রুত গুরুতর হয়ে ওঠে। দলের ফিজিও দ্রুত তাকে পরীক্ষা করে দেখেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতাল নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মাঠেই উপস্থিত অ্যাম্বুলেন্সে করে তামিমকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই: হারাতে বসেছিলেন পালস

হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রথমে কিছু পরীক্ষা করা হয়। ইসিজি (ECG) ভালো আসলেও অন্য একটি পরীক্ষায় দেখা যায়, তামিমের হার্টের সমস্যা হতে পারে। প্রথমে তিনি কিছুটা ভালো অনুভব করছিলেন, এমনকি কথা বলছিলেনও। কিন্তু হঠাৎ করেই তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়।

এরপরই তাকে ঢাকায় হেলিকপ্টারে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। বিকেএসপিতে হেলিকপ্টার পৌঁছানোর পর যখন তাকে স্থানান্তর করতে যাওয়া হয়, তখনই তামিম পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়েন। মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে থাকে, পালস পাওয়া যাচ্ছিল না।

আরও পড়ুন:

বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে মাশরাফির আবেগঘন বার্তা

অ্যাম্বুলেন্স চালকের অছিলায় বাঁচলো তামিমের জীবন, জানুন আসল ঘটান তার মুখ থেকে

জ্ঞান ফিরেই যার সঙ্গে কথা বললেন তামিম, তবে শঙ্কামুক্ত নন

পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে, চিকিৎসকদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ঢাকায় নেওয়ার পরিবর্তে স্থানীয় হাসপাতালেই চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, কারণ এই অবস্থায় দীর্ঘ ভ্রমণ বিপজ্জনক হতে পারত। দ্রুত তাকে হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে ফিরিয়ে আনা হয়।

লাইফ সাপোর্ট ও জরুরি অস্ত্রোপচার

হাসপাতালে ফিরিয়ে আনার পর চিকিৎসকরা তামিমকে লাইফ সাপোর্টে নেন। এরপর দ্রুত এনজিওগ্রাম করা হয়, যেখানে দেখা যায়, তার দুটি আর্টারির মধ্যে একটি সম্পূর্ণ ব্লক হয়ে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে স্টেন্ট (রিং) পরানো হয়।

প্রায় কয়েক ঘণ্টার চেষ্টার পর চিকিৎসকরা অবশেষে তার অবস্থা স্থিতিশীল করতে সক্ষম হন। তামিম বর্তমানে সিসিইউতে (CCU) পর্যবেক্ষণে আছেন।

পরিবার ও সতীর্থদের উদ্বেগ

এই ঘটনার পরপরই তামিমের স্ত্রী হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং এখনো তার পাশে রয়েছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কর্মকর্তারাও পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তামিমের সাবেক ও বর্তমান সতীর্থরা তার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছেন।

তামিম এখন কেমন আছেন?

সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তামিম ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। তিনি কিছু কথা বলতে পারছেন এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে তাকে আরও কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হবে।

কেন এই ঘটনা ঘটল?

তামিম ইকবাল আগে থেকে কোনো হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন কি না, তা নিয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শারীরিক পরিশ্রম, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস বা অতিরিক্ত স্ট্রেস থেকে এই ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।

একটি বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেলেন তামিম

দ্রুত সিদ্ধান্ত ও চিকিৎসা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারত। হাসপাতালের ডাক্তার, দলের ফিজিও, এবং সতীর্থদের দ্রুত পদক্ষেপের কারণেই তামিমের জীবন রক্ষা পেয়েছে। এ ঘটনা আবারও দেখিয়ে দিল, খেলোয়াড়দের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা কতটা জরুরি।

ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা এখন তামিমের দ্রুত সুস্থতার জন্য অপেক্ষা করছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই অভিজ্ঞ তারকা সুস্থ হয়ে আবার মাঠে ফিরতে পারবেন কি না, তা সময়ই বলে দেবে।

মো: রাজিব আলী/

খেলা - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ