ঢাকা, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১

গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের জন্য জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত

শেয়ারবাজারে পদ্মা ইসলামী লাইফের বর্তমান অবস্থা

২০২৫ মার্চ ২৪ ১০:৪০:৫২
শেয়ারবাজারে পদ্মা ইসলামী লাইফের বর্তমান অবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের বিমা খাতে নজিরবিহীন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। গ্রাহকদের বকেয়া বিমা দাবি পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটি কুমিল্লার সদর থানার বাটাবাড়িয়া মৌজায় অবস্থিত ২০ শতক জমি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেয়েছে কোম্পানিটি। ১২ মার্চ ২০২৫ তারিখে আইডিআরএর এক চিঠির মাধ্যমে জমি বিক্রির এই অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে, ২০ জানুয়ারি পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ঘোষণা

আজ সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পদ্মা ইসলামী লাইফ জানিয়েছে, জমিটি ১ কোটি ৯০ লাখ টাকায় বিক্রি করা হবে। এই অর্থ দিয়ে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক সংকট কিছুটা কমানো সম্ভব হবে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে, কারণ দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক চাপে রয়েছে।

জমির বিস্তারিত বিবরণ

বিক্রির জন্য নির্ধারিত জমিটির বৈধ কাগজপত্র ও বিবরণ নিম্নরূপ:

সিএস খতিয়ান নম্বর: ৪

এসএ খতিয়ান নম্বর: ৯

বিআরএস খতিয়ান নম্বর: ৫৯

সিএস ও এসএ প্লট নম্বর: ৫০/৪

বিআরএস প্লট নম্বর: ৪৪০

এই জমি বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে গ্রাহকদের বিমা দাবি পরিশোধ করবে প্রতিষ্ঠানটি।

আর্থিক সংকট ও বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ

পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের জীবনবিমা তহবিলে দীর্ঘদিন ধরেই বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি জমি বিক্রির মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। গত কয়েক বছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি, কারণ ২০২১ সালের জন্য মাত্র ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছিল, আর ২০২০, ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে কোনো লভ্যাংশ দেওয়া হয়নি। তবে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছিল।

শেয়ারবাজারে পদ্মা ইসলামী লাইফের বর্তমান অবস্থা

২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৩৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের সংখ্যা ৩ কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার, যার মধ্যে:

উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে: ৩১.৫৬%

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে: ১৬.৯৩%

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে: ৫১.৫১%

গত এক বছরে পদ্মা ইসলামী লাইফের শেয়ার মূল্য সর্বোচ্চ ৩০ টাকা ৮০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ১৩ টাকা ২০ পয়সায় নেমে আসে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকটের কারণে শেয়ার বাজারেও কোম্পানির অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

জমি বিক্রির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা আর্থিক স্থিতিশীলতা আনতে পারলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি কতটা কার্যকর হবে, সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা এখন প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে আরও সুস্পষ্ট ধারণা আশা করছেন। কোম্পানিটি কি ভবিষ্যতে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লাভজনক হবে, নাকি আর্থিক সংকট আরও গভীর হবে—তা সময়ই বলে দেবে।

কেন জমি বিক্রি করা হচ্ছে? গ্রাহকদের বিমা দাবি পরিশোধের জন্য।

জমির অবস্থান: কুমিল্লার সদর থানার বাটাবাড়িয়া মৌজা।

মূল্য: ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

শেয়ারবাজারে প্রভাব: বিনিয়োগকারীরা শেয়ারমূল্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক সংকট কীভাবে কাটবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা।

পদ্মা ইসলামী লাইফের এই পদক্ষেপ বিমা খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে কি না, তা জানতে হলে পরবর্তী কার্যক্রমের দিকে নজর রাখতে হবে।

রাজিব/

শেয়ার নিউজ - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ