ঢাকা, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১

শবে কদর : করণীয় দোয়া ও আমল

২০২৫ মার্চ ২২ ১৫:২৫:৩১
শবে কদর : করণীয় দোয়া ও আমল

নিজস্ব প্রতিবেদক: শবে কদর, যা লাইলাতুল কদর নামে পরিচিত, ইসলামের অন্যতম মহিমান্বিত রাত। এটি এমন একটি রাত যখন হাজার মাসের চেয়েও উত্তম ইবাদতের সুযোগ মেলে। এ রাতেই পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয় এবং ফেরেশতারা আল্লাহর আদেশক্রমে পৃথিবীতে নেমে আসেন।

“নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মহিমান্বিত রাতে। আর আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রজনি কী? মহিমান্বিত রজনি হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।” (সূরা আল-কদর, আয়াত: ১-৩)

শবে কদরের অর্থ ও তাৎপর্য

'শবে কদর' ফারসি শব্দ, যেখানে ‘শব’ অর্থ রাত এবং ‘কদর’ অর্থ মর্যাদা, সম্মান ও তাকদির নির্ধারণ। এই রাতে আল্লাহ তাআলা মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করেন এবং তাঁর অসীম রহমত বর্ষিত হয়।

শবে কদর ২০২৫: সম্ভাব্য তারিখ ও সময়

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

আরও পড়ুন:

রমজানে দান: আপনার জীবনের পরিবর্তন আনতে পারে এই পবিত্র মাস

রমজানের শেষ দশকের বিশেষ আমল: আত্মশুদ্ধির স্বর্ণসময়

“তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের সন্ধান করো।” (বুখারি, হাদিস: ২০১৭; মুসলিম, হাদিস: ১১৬৯)

২০২৫ সালে সম্ভাব্য শবে কদরের রাতগুলো:

২১ রমজান: ২২ মার্চ (শনিবার রাত)

২৩ রমজান: ২৪ মার্চ (সোমবার রাত)

২৫ রমজান: ২৬ মার্চ (বুধবার রাত)

২৭ রমজান: ২৮ মার্চ (শুক্রবার রাত)

২৯ রমজান: ৩০ মার্চ (রোববার রাত)

শবে কদরের ফজিলত

শবে কদর হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

“যে ব্যক্তি কদরের রাতে ঈমান ও সওয়াবের আশায় নামাজে দাঁড়ায়, তার পূর্বের সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।” (বুখারি, হাদিস: ২০১৪; মুসলিম, হাদিস: ৭৬০)

শবে কদরে করণীয় আমল

হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন,

“রমজানের শেষ দশ রাত শুরু হলে নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোমর বেঁধে ইবাদতে মনোনিবেশ করতেন এবং পরিবারকেও ইবাদতের জন্য জাগিয়ে দিতেন।” (বুখারি, হাদিস: ২০২৪)

এই রাতে গুরুত্বপূর্ণ আমলসমূহ:

নফল নামাজ - বেশি বেশি তাহাজ্জুদ ও নফল ইবাদত করা

কোরআন তিলাওয়াত - অর্থসহ তিলাওয়াত করলে উপকারিতা আরও বৃদ্ধি পাবে

জিকির ও দোয়া - আল্লাহর গুণবাচক নাম ও দরুদ শরীফ পড়া

দান-সদকা - গরিব-দুঃখীদের সহায়তা করা

তওবা ও ইস্তেগফার - পাপ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া

শবে কদরের বিশেষ দোয়া

হজরত আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর, তাহলে কোন দোয়া পড়বো?" নবীজি উত্তরে বলেন,

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ العَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন করিম, তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি”

অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, দয়ালু, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন।” (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫১৩)

শবে কদর কেন গুরুত্বপূর্ণ?

এটি হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম

এ রাতে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়

ফেরেশতারা পৃথিবীতে নেমে আসেন

এ রাতে ইবাদত করলে পাপ ক্ষমা হয়

আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়

শবে কদর এমন একটি রাত, যেখানে অফুরন্ত বরকত ও রহমত বর্ষিত হয়। আমাদের উচিৎ এই মহিমান্বিত রাতে অধিক পরিমাণে নামাজ, দোয়া ও ইবাদতে মনোনিবেশ করা। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ সুন্দর করে তোলাই হবে আমাদের মূল লক্ষ্য। আসুন, শবে কদরকে সর্বোত্তমভাবে কাজে লাগাই!

আব্দুর রহিম/

ধর্ম - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ