ঢাকা, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১

অনলাইন পোর্টালের নিয়ে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ৭ দফা সুপারিশ

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মার্চ ২২ ১৪:৪৭:৪৩
অনলাইন পোর্টালের নিয়ে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ৭ দফা সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: অনলাইন সাংবাদিকতার দ্রুত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে ওঠা অনলাইন পোর্টালগুলো একদিকে যেমন সংবাদমাধ্যমের প্রসারকে ত্বরান্বিত করছে, অন্যদিকে হলুদ সাংবাদিকতা, অনৈতিক ব্ল্যাকমেইলিং ও নাগরিক হয়রানির সুযোগ তৈরি করছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সাতটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে, যা শনিবার (২২ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

অনলাইন সাংবাদিকতা: সম্ভাবনা বনাম সংকট

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ উদ্যোগের সংবাদভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে যথাযথ নিয়ন্ত্রণের অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলো অপসাংবাদিকতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক প্রভাব ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ প্রকাশের কারণে প্রকৃত সাংবাদিকতার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আরও পড়ুন:

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের সময়সীমা বেঁধে দিলেন ইসি সচিব

সুখী দেশের তালিকায় মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কারও পেছনে বাংলাদেশ

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের মতে, পূর্ববর্তী সরকারের অনলাইন নীতিমালা কার্যকরভাবে এ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। তাই এই নীতিমালা যুগোপযোগী করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

অনলাইন পোর্টাল সংস্কারের জন্য ৭ দফা সুপারিশ

১. নিবন্ধন নীতিমালার আধুনিকায়নঅনলাইন পোর্টালের নিবন্ধন ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও আধুনিক করতে নীতিমালা হালনাগাদ করা প্রয়োজন। এটি স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশনের অধীনে নিয়ে আসার প্রস্তাব করা হয়েছে।

২. পূর্ববর্তী নিবন্ধনগুলোর স্বচ্ছ পর্যালোচনাগত দশকে যেসব অনলাইন পোর্টাল নিবন্ধন পেয়েছে, সেগুলো স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হয়নি। তাই এসব নিবন্ধন পুনঃপর্যালোচনার দায়িত্ব স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশনের হাতে থাকা উচিত।

৩. অপ্রয়োজনীয় তদন্ত পদ্ধতির বিলুপ্তিবর্তমানে অনলাইন পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য একাধিক নিরাপত্তা সংস্থার তদন্তের প্রয়োজন হয়। এটি অহেতুক হয়রানির সৃষ্টি করে। সংবাদপত্রের ডিক্লারেশনের জন্য পুলিশের তদন্ত ব্যবস্থা যেমন রয়েছে, অনলাইন পোর্টালের জন্য সেটিই যথেষ্ট হবে।

৪. বার্ষিক নবায়ন পদ্ধতির অবসানএকবার নিবন্ধন পাওয়ার পর অনলাইন পোর্টালের বার্ষিক নবায়ন প্রক্রিয়া বাতিল করা উচিত, যা প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি করছে।

৫. সংবাদ সম্প্রচারে স্বাধীনতা নিশ্চিত করাবর্তমান অনলাইন নীতিমালায় আইপিটিভি ও অনলাইন পোর্টালে সংবাদ বুলেটিন সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই বিধিনিষেধ বাতিল করা প্রয়োজন, যাতে অনলাইন সাংবাদিকতা আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।

৬. সরকারি বিজ্ঞাপন বণ্টনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাঅনলাইন পোর্টালে সরকারি বিজ্ঞাপন বণ্টনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যাতে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত হয়।

৭. ট্রেড লাইসেন্স ফি কমানোবর্তমানে অনলাইন পোর্টালের ট্রেড লাইসেন্সের ফি সাধারণ ট্রেড লাইসেন্সের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি, যা সংবাদমাধ্যম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এ অযৌক্তিক ফি কমিয়ে আনার প্রয়োজন রয়েছে।

সংস্কার না হলে কী হতে পারে?

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন মনে করে, এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা না হলে অনলাইন পোর্টালের অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার আরও বাড়বে এবং প্রকৃত সাংবাদিকতা হুমকির মুখে পড়বে। অনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমের কারণে ভুল তথ্য প্রচার, মিথ্যা সংবাদ ও হলুদ সাংবাদিকতা আরও বিস্তার লাভ করবে।

সংবাদমাধ্যমের নৈতিকতা ও বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে দ্রুত এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করছে কমিশন। এখন দেখার বিষয়, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই সুপারিশগুলোর কতটুকু বাস্তবায়ন করে।

মো: রাজিব আলী/

জাতীয় - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ