ঢাকা, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১

ইতিহাসের নতুন মোড়:

শেখ মুজিবসহ ৪ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মার্চ ২১ ১২:২০:৪৯
শেখ মুজিবসহ ৪ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন সংশোধনের খসড়া অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। এই সংশোধনের ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। পরিবর্তে, তাদের নতুন পরিচয় হবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।

জামুকার ৯৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১০ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম এই খসড়ায় স্বাক্ষর করেছেন। আইন সংশোধনের ফলে শুধু রাজনীতিবিদরাই নন, আরও চার শ্রেণির মানুষকেও ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নতুন চার শ্রেণি:

1. বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবদান রাখা পেশাজীবীরা।

2. মুজিবনগর সরকারের অধীন কর্মকর্তা।

3. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করা সাংবাদিক।

4. স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা।

এই পরিবর্তনের ফলে চূড়ান্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তত ১০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় নতুনভাবে লেখা হবে, যা তাদের দীর্ঘদিনের স্বীকৃতির ধরন বদলে দেবে।

সরকারের ব্যাখ্যা ও অবস্থান

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, “মুক্তিযোদ্ধা শুধু তারাই, যারা সরাসরি রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। বাকিদের ভূমিকা অপরিসীম হলেও, তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত নন, বরং তাদের নতুন পরিচয় হবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’। তবে, এই পরিবর্তনের ফলে তাদের কোনো মর্যাদা বা সুযোগ-সুবিধায় প্রভাব পড়বে না।”

তিনি আরও জানান, “বীরাঙ্গনা এবং সীমান্তবর্তী ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের চিকিৎসক ও নার্সদের বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বহাল থাকবে।”

বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া

এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে নানা মহল থেকে প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। ইতিহাসবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারীদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা অনুচিত। তবে, যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, তাদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।”

মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রক্ষা করতে হলে রাজনীতিবিদদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করা যাবে না। তাদের ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধে অপরিহার্য ছিল।”

বিএনপির হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক হারুন হাবীবও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও নেতৃত্বকে নতুন বিতর্কে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন শ্রেণীবিভাগ নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই পরিবর্তন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ধারাকে কতটা প্রভাবিত করবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে একথা স্পষ্ট যে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নতুন করে ভাবার এবং তার ইতিহাসকে সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা আরও গভীরভাবে অনুভূত হচ্ছে।

মো: রাজিব আলী/

রাজনীতি - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ