ঢাকা, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১

শবে কদর কবে হাদিস ও কোরআনে কি বলা আছে

২০২৫ মার্চ ২১ ১০:৫১:১৩
শবে কদর কবে হাদিস ও কোরআনে কি বলা আছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান মাসের শেষ দশকের এক অমূল্য রত্ন, লাইলাতুল কদর, যাকে আমরা শবে কদর বলেও জানি, সেই রাতটি কী রাত, তা নিয়ে এক ধরনের রহস্যময়তা আছেই। কোরআন থেকে এই রাতের বর্ণনা পাওয়া গেলেও, ঠিক কোন রাতে তা সংঘটিত হয়, সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। তবে আল্লাহ তাআলার রহমতের রাতটির সন্ধান আমরা একে একে পেতে পারি—যতটা জানার চেষ্টা করি, ততটাই তার প্রতি আকৃষ্ট হই।

কদর রাতের সুর থেকে সুরা কদর পর্যন্ত

কোরআনে প্রথম থেকেই রমজান মাসের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সুরা বাকারা-এর আয়াতে বলা হয়েছে:

“রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭)

এবং সুরা কদরের আয়াতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে—

“নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি কদর রাতে।” (সুরা কদর, আয়াত: ১)

এটা স্পষ্ট যে, কদর রাতটি রমজান মাসে আসবে, কিন্তু ঠিক কোন রাত, তা বোঝানোর জন্য আল্লাহ তাআলা কোনো নির্দিষ্ট রাত প্রকাশ করেননি।

শেষ দশকের বেজোড় রাত: রহমতের সন্ধানে

বিশ্বনবি (সা.) তার উম্মতের জন্য এক বিস্ময়কর দয়া রেখেছেন। তিনি এই রহস্যময় রাতটি গোপন রেখেছেন যাতে আমরা আরও চেষ্টা করি, আরও ইবাদত করি। হাদিসে বলা হয়েছে—

“তোমরা কদর রাতকে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে অনুসন্ধান কর।” (বুখারি, হাদিস: ২০২০)

তাহলে, আমাদের চেষ্টা থাকবে প্রতি বেজোড় রাতেই—অথবা একেকটা রাতেই—কদর রাতের ফজিলত অর্জন করা।

কোথায় কদর রাত? সাতাশ, একুশ, তেইশ?

অনেকেই মনে করেন, ২৭ রমজান রাতেই কদর রাত ঘটে। এই ধারণা অনেকটা জনপ্রিয়, কারণ রাসুল (সা.) নিজেই বলেছেন—

“যে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করবে, সে যেন তা ২৭তম রাতে করে।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৬৪৭৪)

তবে এখানেই শেষ নয়। সাহাবি উবাই বিন কাব (রা.) শপথ করে বলেছিলেন, কদর রাত ২৭ তম রাতে আসবে। (মুসলিম, হাদিস: ১৮২২)

তবে অনেক হাদিসে ২১ তম ও ২৩ তম রাত-এরও উল্লেখ রয়েছে।

আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, “রাসুল (সা.) আমাকে বলেন, আমি কদর রাত এক বেজোড় রাতে দেখেছি, আর সেই রাত ছিল ২১ রমজান।” (বুখারি, হাদিস: ২০১৮)

আরেকটি হাদিসে ২৩ রমজান রাতের প্রসঙ্গ উঠে আসে—

“রাসুল (সা.) ২৩ তম রাতে কাদা ও পানিতে সেজদা করেছিলেন।” (মুসলিম, হাদিস: ২৮৩২)

কদর রাতের রহস্য এবং মানবতার শিক্ষা

এটি বোঝা যায়, আল্লাহ তাআলা কদর রাতকে গোপন রেখেছেন যাতে বান্দারা আল্লাহর প্রতি একাগ্রতা ও ইবাদতের জন্য প্রতিটি রাতেই নিরলস প্রচেষ্টা চালায়। এই রাতটি একাধিক রাতে আসতে পারে, যেমন ২৭ রমজান, ২৫ রমজান, বা ২৯ রমজান, কিন্তু যখন আসবে, তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। আল্লাহ চান, তাঁর বান্দারা শেষ দশকের প্রতিটি রাতেই কদরের সন্ধানে ইবাদত করে।

এটি আমাদের জন্য এক মহা সুযোগ, যেন আমরা বেশি বেশি ইবাদত করে আল্লাহর রহমত লাভ করি।

আল্লাহ তাআলা চাইছেন, আমরা একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর রহমত ও মাগফিরাতের সন্ধানে থাকি। লাইলাতুল কদর আসবে, তবে কখন, তা তিনি জানেন। তবে আমরা যেন প্রতিটি রাতে অধিকারী হতে পারি, সেজন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিক সময়ে তাঁর রহমতের ভাগী বানান। আমীন।

আব্দুর রহিম/

ধর্ম - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ