ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১

মহানবী (সা.)-এর ইতিকাফ: সঠিক ও পরিপূর্ণ গাইড লাইন

২০২৫ মার্চ ২০ ২২:২০:৫৫
মহানবী (সা.)-এর ইতিকাফ: সঠিক ও পরিপূর্ণ গাইড লাইন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান মাস এলেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজেকে একান্তে সঁপে দিতেন আল্লাহর সান্নিধ্যে। প্রতিবারের মতো তিনি এই মাসের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন, যেখানে দুনিয়ার সব ব্যস্ততা ভুলে একান্তে ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। তার এই তপস্যার পথ ধরে তার স্ত্রীগণও ইতিকাফের আমল অনুসরণ করতেন। (বুখারি, হাদিস: ২,০৪১)

কেন ইতিকাফ করতেন মহানবী (সা.)?

ইতিকাফ শুধুই নির্জনে অবস্থান নয়; এটি ছিল আত্মশুদ্ধি, ধ্যান ও আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গভীর করার এক বিশেষ অনুশীলন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি কদরের রাত্রির সন্ধানে প্রথম দশ দিন ইতিকাফ করলাম। তারপর মধ্যবর্তী দশ দিন করলাম। পরে ওহির মাধ্যমে জানতে পারলাম, কদরের রাত শেষ দশ দিনেই। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন এ সময় করে।’ (মুসলিম, হাদিস: ১,১৬৭) এমনকি, যে বছর তিনি পরলোকগমন করেন, সে বছর বিশ দিন ইতিকাফ করেছিলেন। (বুখারি, হাদিস: ২,০৪৪)

ইতিকাফের নীরব আশ্রয়

রাসুল (সা.) ইতিকাফের সময় মসজিদে একটি বিশেষ তাঁবুতে নির্জনে থাকতেন। আবু সাইদ (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) এক তুর্কি তাঁবুতে ইতিকাফ করতেন, যার প্রবেশমুখে একটি চাটাই ছিল। তিনি মাঝে মাঝে সেটি সরিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলতেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৭৭৫)

তিনি বিশ রমজানের সূর্যাস্তের পর একুশ রমজানের রাতের শুরুতে ইতিকাফগাহে প্রবেশ করতেন এবং ঈদের চাঁদ দেখার পর বের হতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) ফজর আদায়ের পর ইতিকাফগাহে প্রবেশ করতেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ১,১৭৩)

নিয়ম-নীতি ও পারিবারিক সংযোগ

ইতিকাফকালে মহানবী (সা.) দুনিয়াবি কার্যকলাপ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকতেন না। তিনি অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন না, জানাজায় অংশ নিতেন না, স্ত্রী-সংসর্গ ত্যাগ করতেন, তবে তার স্ত্রীগণ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং আলাপ করতেন। একবার উম্মুল মুমিনীন সাফিয়া (রা.) তার সঙ্গে দেখা করতে এলে নবীজি (সা.) তাকে ঘর পর্যন্ত এগিয়ে দেন। (বুখারি, হাদিস: ৩,২৮১, ৩,০৩৯, ২,০২৯)

ইতিকাফ মানে পরিবার থেকে দূরে থাকা নয়, বরং পরিবারকে সঠিকভাবে পরিচালনার একটি অনন্য শিক্ষা। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘আমি নবীজি (সা.)-এর চুল আচঁড়াতাম, যখন তিনি ইতিকাফে থাকতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ২৯৬)

স্ত্রীদের ইতিকাফের আগ্রহ ও নবীজির সিদ্ধান্ত

একবার নবীজি (সা.) ইতিকাফের জন্য মসজিদে প্রবেশ করেন। এসময় তার স্ত্রী আয়েশা (রা.) ইতিকাফ করতে চাইলেন, এবং তার জন্যও তাঁবু টানানো হলো। এরপর অন্য স্ত্রীরাও তাঁবু স্থাপন করেন। কিন্তু নবীজি (সা.) যখন দেখলেন, মসজিদে অনেকগুলো তাঁবু হয়ে গেছে, তিনি বললেন, ‘তোমরা কি এর মাধ্যমে পুণ্য অর্জন করতে চাও?’ এরপর তিনি নিজের তাঁবু সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং সে বছর ইতিকাফ করলেন না। তবে, শাওয়ালের প্রথম দশ দিন তিনি ইতিকাফের কাজা আদায় করেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৩৬৬৩)

ইতিকাফের কাজা ও আল্লাহর প্রেমে আত্মনিবেদন

একবার সফরে থাকার কারণে ইতিকাফ পালন সম্ভব না হওয়ায় তিনি পরবর্তী বছর বিশ দিন ইতিকাফ করে তা পূরণ করেন। (তিরমিজি, হাদিস: ৮০৩)

ইতিকাফের শিক্ষা

মহানবী (সা.)-এর ইতিকাফ আমাদের জন্য এক অনন্য শিক্ষা রেখে গেছে। এটি শুধু নির্জনে বসে থাকা নয়, বরং আত্মশুদ্ধির এক মহিমান্বিত উপলক্ষ। দুনিয়ার ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে নিবিড় সময় কাটানো, আত্মশুদ্ধির পথে এগিয়ে চলাই ইতিকাফের মূল দর্শন। এই রমজানে, আসুন আমরা মহানবী (সা.)-এর এই সুন্নাহ থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করি এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সচেষ্ট হই।

মো: রাজিব আলী/

ধর্ম - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ