ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১

প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ:

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে নতুন দালিলিক প্রমাণ

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মার্চ ২০ ১৪:৪০:২৩
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে নতুন দালিলিক প্রমাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতির ইতিহাসে এক ভয়াল অধ্যায়, যেখানে ছাত্র-জনতার রক্তের ঝরে পড়ার পেছনে সরাসরি একটি শীর্ষ নেতার নির্দেশের অভিযোগ উঠেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি একসময় দেশের শাসনক্ষমতা হাতে রেখেছিলেন, তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নতুন দালিলিক প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। অভিযোগ, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। এই নির্দেশের ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদনটি আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে আদালতে জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

নতুন দালিলিক প্রমাণ: অপরাধের দৃশ্যপট

চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়ে বলেছেন, তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সরাসরি দালিলিক প্রমাণ পেয়েছেন, যা তার আদেশ-নির্দেশের সত্যতা নিশ্চিত করে। "এটি শুধু অভিযোগ নয়, দালিলিক প্রমাণ যা নির্দেশ দিচ্ছে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের কথা," বলেছেন প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন। এসব প্রমাণের ভিত্তিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা ট্রাইব্যুনালে জমা পড়েছে।

এপ্রিলের মধ্যে মামলা শেষ করার প্রতিশ্রুতি

আগামী এপ্রিলের মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে রয়েছে গণ-অভ্যুত্থান, গুম-খুন এবং ২০১৩ সালের মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজত আন্দোলনের উপর হামলা। এই মামলাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন কেবল দেশের ভবিষ্যতের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক আদালতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে যাচ্ছে।

সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি: ‘শীর্ষ দায়বদ্ধতা’

এতদিন ধরে এসব মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য শীর্ষ নেতৃত্বের দায়বদ্ধতা নিয়ে আলোচনা চলছিল। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর পেছনে একটি সুস্পষ্ট শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ রয়েছে। "এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে 'সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি' থাকে, যেখানে শীর্ষ নেতা সরাসরি নির্দেশ দেন বা অপরাধ থামাতে ব্যর্থ হন," বলছেন তারা। এই শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে শেখ হাসিনার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ, যাকে 'সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি'র আওতায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।

শহীদ পরিবারের ক্ষোভ: বিচারহীনতা নিয়ে প্রশ্ন

গত বছরের আন্দোলনের পর শহীদ পরিবারের সদস্যরা এখনো ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, বিশেষত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরও অনেক অপরাধী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। শহীদ পরিবারের সংগঠন ‘জুলাই ২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’-এর সাধারণ সম্পাদক রবিউল আউয়াল বলেছেন, "এটা কেমন বিচার, যেখানে একটি হত্যাকাণ্ডে একাধিক ব্যক্তির ভূমিকা থাকে, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা কয়জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি?" তাদের দাবি, আসামিদের গ্রেপ্তার না করা হলে, বিচার প্রক্রিয়া কখনোই দৃশ্যমান হবে না।

বিশ্ববাসীর নজরে: ট্রাইব্যুনালের পদক্ষেপ

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং দেশের জনগণ এখন অত্যন্ত গভীরভাবে চোখ রাখছে এই বিচার প্রক্রিয়ার ওপর। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো শুধু দেশের নয়, বিশ্বের ইতিহাসে একটি ভয়াবহ অধ্যায়ের অংশ হতে যাচ্ছে। ট্রাইব্যুনাল যদি এই মামলার যথাযথ তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করে, তা দেশবাসী এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে থাকবে।

আব্দুল কাদের/

রাজনীতি - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ