ঢাকা, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

রাতের রিলস আসক্তি: অদৃশ্য শত্রুর ছোবল

লাইফস্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মার্চ ১৯ ১৭:০১:৩২
রাতের রিলস আসক্তি: অদৃশ্য শত্রুর ছোবল

নিজস্ব প্রতিবেদক: আধুনিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। আর এই মাধ্যমগুলোর রাজত্ব এখন ছোট ছোট ভিডিও বা রিলসের দখলে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, টিকটক—সবখানেই রিলসের দাপট। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সীদের কাছেই রিলস দারুণ জনপ্রিয়। তবে এই মজার ভিডিওগুলো অজান্তেই আমাদের শরীর ও মনের ওপর ভয়ংকর প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে যখন আমরা ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রল করতে থাকি।

চীনের হেবেই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে ঘুমানোর আগে অতিরিক্ত রিলস দেখার ফলে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ, আমরা বিনোদনের নামে নিজেদের স্বাস্থ্যকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছি!

রাতের রিলস দেখার বিপদ

রাতে ঘুমানোর আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিলস দেখা নতুন কোনো ট্রেন্ড নয়, বরং অনেকের কাছে এটি রুটিনের অংশ হয়ে গেছে। তবে গবেষকেরা বলছেন, এই অভ্যাস আমাদের নার্ভাস সিস্টেমকে অতি সক্রিয় করে তোলে, হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তচাপ বাড়ায়।

এক গবেষণায় ৪ হাজার ৩১৮ জন অংশগ্রহণকারীর তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা দেখেছেন, তরুণ ও মধ্যবয়সীদের ক্ষেত্রে ঘুমের আগে রিলস দেখার প্রবণতা বেশি এবং তাদের মধ্যে হাইপারটেনশনের ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে বেশি।

রিলস দেখার নেপথ্যে মস্তিষ্কের ক্ষয়

শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে এই আসক্তি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারির সময় থেকে শর্ট ভিডিওর প্রতি আসক্তি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আমাদের মনোযোগ কমছে, সৃজনশীল চিন্তার জায়গা সংকুচিত হচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ রিলস দেখার ফলে মস্তিষ্ক একপ্রকার স্থবির হয়ে পড়ে—এই অবস্থাকে বলা হচ্ছে ‘ব্রেন রট’।

তবে সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হলো, ঘুমের আগে রিলস দেখার ফলে আমাদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। স্ক্রিনের উজ্জ্বল নীল আলো মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ কমিয়ে দেয়, ফলে ঘুম আসতে দেরি হয় এবং গভীর ঘুম বাধাগ্রস্ত হয়।

কীভাবে এড়ানো যায় এই ক্ষতি?

গবেষকেরা এই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসার কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর উপায় বাতলে দিয়েছেন:

‘স্ক্রিন টাইম’ নির্ধারণ করুন: ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে মোবাইল ও অন্যান্য স্ক্রিন ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ করুন।

বিছানার পাশে মোবাইল নয়: ঘুমানোর সময় মোবাইল দূরে রাখুন বা ‘ডিস্টার্ব না করুন’ মোড চালু করুন।

রাতের রুটিন বদলান: ঘুমানোর আগে বই পড়া, হালকা ব্যায়াম, মেডিটেশন বা মিউজিক শুনার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

ডিজিটাল ওয়েলবিয়িং ব্যবহার করুন: স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করতে স্মার্টফোনের ‘ডিজিটাল ওয়েলবিয়িং’ ফিচার ব্যবহার করুন।

রিলস দেখতে যতই আনন্দদায়ক হোক না কেন, এটি যখন আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে শুরু করে, তখনই সচেতন হওয়া জরুরি। রাতের ঘুম ভালো হলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে। তাই বিনোদন আর স্বাস্থ্যের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

আব্দুল কাদের/

লাইফ স্টাইল - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ