ঢাকা, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

১২ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি: শেয়ারবাজারে ঝুঁকির সংকেত

২০২৫ মার্চ ১৯ ১২:৪৫:২৪
১২ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি: শেয়ারবাজারে ঝুঁকির সংকেত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে একধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, কারণ তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে ১২টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি ছাড়িয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর বেনামি ঋণ, জালিয়াতি এবং অনাদায়ী ঋণের প্রকোপ বেড়েছে, যার ফলে এই ঋণগুলোর একটি বড় অংশ খেলাপির তালিকায় যুক্ত হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মনে প্রশ্ন জাগছে—এই ব্যাংকগুলো কি আদৌ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে?

নতুন নীতিমালা: বিনিয়োগকারীদের জন্য দুঃসংবাদ?

বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি নতুন নীতিমালা প্রকাশ করেছে, যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি, তারা কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে না। যদিও এই বিধান ২০২৫ সালের জন্য কার্যকর হবে, তবে ২০২৪ সালেই ব্যাংকগুলোর জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে, বিশেষ করে যদি তারা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়।

বিশেষ ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের ভয়াবহ চিত্র

ব্যাংকিং খাতে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ যথাক্রমে ২১.০৮%, ২৯.৩৩%, ৩০.৮৬% এবং ৩৪.৭৯%। এছাড়া, আইএফআইসি ব্যাংকও একই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অন্যদিকে, ব্যাংক এশিয়ার খেলাপি ঋণ ১০%, ওয়ান ব্যাংকের ১০.৫৮% এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) ১২.১১%।

দেশের সামগ্রিক খেলাপি ঋণের ভয়াবহ অবস্থা

ডিসেম্বর ২০২৪ শেষে, দেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০.২০ শতাংশ। মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে এই ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। নতুন ঋণ শ্রেণীকরণ নীতিমালার ফলে আরও অনেক ব্যাংক খেলাপি ঋণের বোঝায় জর্জরিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক

ব্যাংকগুলোর ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ তাদের লাভজনকতা কমিয়ে দিচ্ছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে নতুন করে সংকটে পড়ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে এবং বাজারে অনাস্থার সৃষ্টি হবে।

ভবিষ্যৎ কী ইঙ্গিত দিচ্ছে?

বিশ্লেষকদের মতে, যদি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ এভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে শুধু শেয়ারবাজার নয়, সামগ্রিক অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিনিয়োগকারীদের তাই সচেতন হয়ে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং ভবিষ্যতের ঝুঁকি বিবেচনায় রাখতে হবে। সামনের দিনগুলোতে ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

রাজিব/

শেয়ার নিউজ - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ