ঢাকা, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

MD. RAZIB ALI

Senior Reporter

চীনের প্রাণভোমরার দিকে হাত বাড়াচ্ছে ভারত

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মার্চ ১৭ ১০:২৫:৫৭
চীনের প্রাণভোমরার দিকে হাত বাড়াচ্ছে ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের বুকে ছড়িয়ে থাকা আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এখন আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ৫৭২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল শুধু ভারতীয় প্রতিরক্ষার জন্যই নয়, চীনের জন্যও এক বিশাল কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

চীনের দুর্বলতা: মালাক্কা প্রণালী

বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম সামুদ্রিক পথ মালাক্কা প্রণালী চীনের জন্য একটি প্রধান দুর্বলতা হিসেবে কাজ করছে। চীনের মোট ৭০ শতাংশ তেলের আমদানি এবং বিশাল বাণিজ্য এই সংকীর্ণ জলপথের উপর নির্ভরশীল। সাংহাই বন্দর থেকে যাত্রা করা কোনো জাহাজ যদি মধ্যপ্রাচ্যের দিকে যায়, তাহলে তাকে দক্ষিণ চীন সাগর অতিক্রম করে মালাক্কা প্রণালী পেরিয়ে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পাশ দিয়ে বঙ্গোপসাগর হয়ে আরব সাগরে প্রবেশ করতে হয়। এই পথেই ভারতের শক্তিশালী নৌবাহিনী নজরদারি চালায়, যা চীনের জন্য এক বিশাল উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারতের কৌশলগত উপস্থিতি ও সামরিক শক্তি

ভারত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছে। অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন এবং নজরদারি সিস্টেম মোতায়ন করে মালাক্কা প্রণালীর প্রবেশপথের ওপর কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে ভারত। মার্কিন নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল আলফ্রেড থেয়ার ১৮৯৭ সালে এক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, "যে ভারত মহাসাগরকে নিয়ন্ত্রণ করবে, সে এশিয়াকে শাসন করবে।" আজকের বাস্তবতা এই ভবিষ্যদ্বাণীকেই সত্যি করে তুলছে।

বিশ্ব বাণিজ্যে ভারত মহাসাগরের গুরুত্ব

খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে ভারত মহাসাগরের বাণিজ্যপথ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ভারত, আরব ও পূর্ব আফ্রিকাকে সংযুক্ত করেছে। বর্তমানে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ তেল পরিবহন এই জলপথ দিয়ে সম্পন্ন হয়। শুধু তেল নয়, বিশ্বের অর্ধেকের বেশি কয়লা রপ্তানি করে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা, যা প্রধানত ভারত, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার জ্বালানি চাহিদা মেটায়।

কোকো আইল্যান্ড ও চীনের সামরিক উপস্থিতি

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ঠিক উত্তরে মিয়ানমারের কোকো আইল্যান্ডে চীন তার সামরিক উপস্থিতি জোরদার করছে। এটি ভারতের জন্য এক নতুন উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক ভারতের কৌশলগত অবস্থানের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

কোয়ার্ড জোট ও ভারতের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা

চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতির জবাবে ভারত শুধু নিজের সামরিক শক্তি বাড়িয়েই থেমে থাকেনি, বরং কোয়ার্ড জোটের (ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া) সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করেছে। ভবিষ্যতে ভারত ও চীনের মধ্যে কোনো বড় সংঘাত হলে ভারত তার মিত্রদের সঙ্গে একযোগে চীনের জ্বালানি ও বাণিজ্য প্রবাহ বন্ধ করার কৌশল গ্রহণ করতে পারে, যা চীনের জন্য বিশাল অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

মালাক্কা বাইপাসের চীনা পরিকল্পনা

চীন মালাক্কা প্রণালীকে বাইপাস করার জন্য থাইল্যান্ডের ক্রাক হাল প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছে। তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান ভারতের কৌশলগত সুবিধাকে অক্ষুন্ন রাখবে। ফলে চীনের জন্য এটি পুরোপুরি কার্যকর সমাধান হয়ে উঠতে পারবে না।

চীনের মালাক্কা দুঃস্বপ্নের ভবিষ্যৎ

যদি ভারত তার সামরিক ও কৌশলগত অবস্থান আরও শক্তিশালী করে, তাহলে চীনের মালাক্কা দুঃস্বপ্ন আরও গভীর হবে। ভবিষ্যতে কোনো সংঘাত হলে ভারত সহজেই এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে চীনের জ্বালানি সরবরাহ ও অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে। ভারত মহাসাগরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যকার এই ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ভবিষ্যতে আরও তীব্র হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

মো: রাজিব আলী/

বিশ্ব - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ