ঢাকা, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত: শেয়ারবাজারে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ৬ সংকটাপন্ন ব্যাংক

২০২৫ মার্চ ১৬ ১২:১৪:২৮
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত: শেয়ারবাজারে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ৬ সংকটাপন্ন ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘদিনের সংকট কাটিয়ে একটি নতুন সুরের সঞ্চারণ শুরু হয়েছে। ১১টি সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের মধ্যে ৬টি ব্যাংক ইতোমধ্যে সফলভাবে পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যা খাতটির জন্য আশার আলো বয়ে এনেছে। গত ছয় মাসে, এই ব্যাংকগুলো তাদের আমানত সংগ্রহ এবং গ্রাহকদের আস্থা ফিরে পেতে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এটাই প্রমাণ, সংকটের পরও একে অপরকে সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে পুনর্গঠন করা সম্ভব।

শুরুর গল্প: সঙ্কটে স্নাতক এবং সংগ্রামের পরিণতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এচ মনসুর ২০২৪ সালের আগস্টে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই ব্যাংকগুলোর পুনর্গঠনে নতুন গতির সঞ্চার হয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেন এবং ৩০ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা প্রদান করেন। এরই মধ্যে, ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), আইএফআইসি ব্যাংক এবং আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক এখন আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল নয়। যদিও খেলাপি ঋণের সমস্যা একেবারে দূর হয়নি, তবুও এই ব্যাংকগুলো এখন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উন্নতির পথে।

পুনরুদ্ধারের মুখে ব্যাংকগুলো: গতির হাওয়া

এই ছয়টি ব্যাংক কীভাবে নিজেদের ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তা কিন্তু সহজ ছিল না। ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইউসিবি, এক্সিম ব্যাংক এবং আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক নতুন আমানত সংগ্রহের মাধ্যমে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। বিশেষত ইসলামী ব্যাংক এবং আইএফআইসি ব্যাংক যথাক্রমে ১৭ হাজার কোটি টাকা এবং ৪ হাজার কোটি টাকা নতুন আমানত সংগ্রহ করেছে। এগুলোর মধ্যে, ইসলামী ব্যাংককে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মনে করা হচ্ছে, যেহেতু তারা এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হওয়ার পর একটি নতুন দিশা পেয়েছে।

অন্যদিকে, সংগ্রামের স্তম্ভ: ৫টি ব্যাংকের নিরন্তর যাত্রা

তবে, যাত্রা এখানেই শেষ নয়। পাঁচটি ব্যাংক এখনো সংকটে রয়েছে এবং তারা এখনও গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এই ব্যাংকগুলো হলো বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা কিছু ব্যাংক। এগুলো প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চাইছে, আর্থিক দুর্বলতার কারণে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ: ব্যাংক রেজোলিউশন আইনের হাত ধরে ভবিষ্যতের দিকে

এখন, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ব্যাংক রেজোলিউশন আইন তৈরি করছে, যা আগামী জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত হবে। এই আইন ব্যাংকগুলোর জন্য একটি নতুন দিশা হতে পারে, যেখানে অকার্যকর ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তবে এই আইন বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত, এখনও ব্যাংকিং খাতের অনেক অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

উপসংহার: সংকটের পরেও সম্ভাবনার কথা

এখানে একটি জিনিস পরিষ্কার: সংকট যতোই কঠিন হোক না কেন, একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা এবং সঠিক নেতৃত্ব সবকিছু বদলে দিতে পারে। ব্যাংক রেজোলিউশন আইনের পরিপ্রেক্ষিতে, খাতটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং অদূর ভবিষ্যতে এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে পারে। যেহেতু কিছু ব্যাংক ইতোমধ্যে পুনরুদ্ধারের পথে, তাই শেয়ারবাজারে একটি নতুন শক্তিশালী বাংলাদেশ ব্যাংকিং খাতের সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।

রাজিব আলী/

শেয়ার নিউজ - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ