ঢাকা, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

রোজায় ওজন নিয়ন্ত্রণ: স্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে রমজানে সুস্থ থাকা

২০২৫ মার্চ ১৫ ১৭:৫৫:১১
রোজায় ওজন নিয়ন্ত্রণ: স্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে রমজানে সুস্থ থাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান মাসে রোজা রাখা শুধুমাত্র ধর্মীয় কর্তব্য নয়, এটি আমাদের শারীরিক সুস্থতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তবে রোজার সময় সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও পরিমিত খাবারের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, যা ঈদের পর অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি কমায়।

রোজায় ওজন বাড়ানোর কারণ

অনেকেই ভেবে ছিলেন রোজা রাখলে অন্তত পাঁচ কেজি কমানো যাবে, কিন্তু ইফতার ও সেহরিতে অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত খাবার গ্রহণের ফলে বেশিরভাগ সময় তাদের লক্ষ্য পূরণ হয় না। ভাজাপোড়া, মিষ্টিজাতীয় খাবার, ও উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবারের অত্যধিক গ্রহণ শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমিয়ে ফেলতে পারে, যা ওজন বাড়ানোর কারণ হতে পারে।

ইফতার ও সেহরির স্বাস্থ্যকর খাবার

বিশেষজ্ঞরা বলেন, রোজার সময় সঠিক খাবার নির্বাচন করে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়া উচিত, যা শরীরের জন্য উপকারী এবং তাড়াতাড়ি ওজন বাড়ানোর ঝুঁকি কমায়।

ইফতারে: গাজর, শসা, ক্যাপসিকাম, গ্রিলড মুরগি, দই, ছানা, ফল, এবং ডাবের পানি খাওয়া উচিত। এই খাবারগুলো কম ক্যালরিযুক্ত এবং শরীরকে হালকা রাখে। ভাজাপোড়া খাবারের পরিবর্তে এসব খাবার গ্রহণে শরীর সুস্থ থাকবে।

সেহরিতে: লাল চালের ভাত, ওটস, সিদ্ধ ডিম, শাকসবজি এবং কম ফ্যাটযুক্ত দুধ খান। এগুলো দীর্ঘ সময় শক্তি প্রদান করবে এবং ক্ষুধা কমাবে। মিষ্টি খাবার এবং চিনি থেকে বিরত থাকা উচিত।

ওজন নিয়ন্ত্রণের কৌশল

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রোজায় ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে কিছু সহজ কৌশল অনুসরণ করা জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে:

পরিমিত খাবার গ্রহণ: ইফতার ও সেহরিতে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

ভাজাপোড়া খাবার কম খান: বেগুনি, পেঁয়াজু, সমুচার পরিবর্তে গ্রিলড বা বেইকড খাবার খাওয়া ভালো।

চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন: মিষ্টি শরবত, হালুয়া, ও অন্যান্য চিনি সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন।

প্রচুর পানি পান করুন: সারাদিন পানি পান করুন যাতে শরীর আর্দ্র থাকে এবং ক্ষুধা কম অনুভূত হয়।

সুষম খাবার গ্রহণ করুন: প্রোটিন, আঁশ, এবং ভালো চর্বিযুক্ত খাবার খেতে হবে, যা দীর্ঘসময় পেট ভরা রাখবে।

শরীরচর্চা করুন: হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

অতিরিক্ত খাবার না খেয়ে ধীরে ধীরে খাওয়া: খাবার ধীরে ধীরে খেলে তা ভালোভাবে হজম হয় এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের ঝুঁকি কমে।

বিশেষজ্ঞের মতামত

‘ফিটলাইফ-বিডি ডটকম’-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ফিটনেস বিশেষজ্ঞ আবু সুফিয়ান তাজ বলেন, "ঈদের পর অনেকের ওজন ৫ পাউন্ড বা তারও বেশি বেড়ে যায়। ঈদে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার কারণে এই ওজন বৃদ্ধি ঘটে। তবে রোজার সময় নিয়মিত এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব।"

ক্যালরি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা

সাধারণত এক দিনে প্রায় ১৭০০ থেকে ২০০০ ক্যালোরি খাওয়া হয়, তবে রোজায় ইফতারে একসাথে প্রায় ২০০০ থেকে ২৫০০ ক্যালোরি খাওয়া হয়ে যেতে পারে। একটি গ্রাম তেলে ৯ ক্যালোরি থাকে, তাই ভাজাপোড়ায় অতিরিক্ত ক্যালোরি জমে যায়। অতিরিক্ত ৫০০ ক্যালোরি যদি একদিনে গ্রহণ করা হয়, তবে এক মাসে প্রায় ৫ পাউন্ড (২ কেজি ৩শ’ গ্রাম) ওজন বেড়ে যাবে।

রোজায় স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখতে খাবার খাওয়ার অভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। সঠিক খাবার নির্বাচন, পরিমিত খাবার গ্রহণ, এবং শরীরচর্চা এর মধ্যে অন্যতম। এসব কৌশল অনুসরণ করলে আপনি রোজায় সুস্থ থাকতে পারবেন এবং ঈদের পর অতিরিক্ত ওজন বাড়ানো থেকে বাঁচতে পারবেন।

আব্দুল রহিম/

ধর্ম - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ