ঢাকা, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

রোজার শরীরে প্রভাব: এক পবিত্র পরিবর্তন

২০২৫ মার্চ ১৫ ১৪:১০:৪৪
রোজার শরীরে প্রভাব: এক পবিত্র পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান মাস, মুসলিমদের জন্য এক আধ্যাত্মিক ও শারীরিক পরিবর্তনের সময়। প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও পৃথিবীজুড়ে সব ধরণের দুনিয়াবি তৃপ্তি থেকে বিরত থেকে তারা এক আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য রোজা পালন করেন। কিন্তু রোজা শুধু আধ্যাত্মিক কল্যাণই দেয় না, শরীরেরও অনেক উপকারে আসে। বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে, রোজার ফলে শরীরে যেসব পরিবর্তন ঘটে তা একেবারেই চমকপ্রদ।

প্রথম দু’দিন: শরীরের প্রাথমিক অভ্যস্ততা

ক্যামব্রিজের অ্যাডেনব্রুক হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ড. রাজিন মাহরুফ জানাচ্ছেন, রোজার প্রথম দুই দিন শরীরের জন্য চ্যালেঞ্জের মতো। যখন আমরা শেষবার খাবার খাই, তার প্রায় আট ঘণ্টা পর শরীর "ফাস্টিং স্টেট"-এ চলে যায়। এই সময়, লিভার ও মাংসপেশি সঞ্চিত গ্লুকোজ ব্যবহার করে শক্তি পেতে শুরু করে। শরীর তখন আস্তে আস্তে চর্বি পোড়াতে শুরু করে, যা ওজন কমাতে সহায়তা করে। তবে এই সময় মাথাব্যথা, দুর্বলতা এবং শ্বাসে দুর্গন্ধের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তিন থেকে সাত রোজা: শক্তির উৎস খোঁজা

এই সময়ের মধ্যে শরীর ধীরে ধীরে চর্বি ভাঙতে শুরু করে, কিন্তু পানির অভাব দেখা দিতে পারে। তাই, ইফতার ও সেহরিতে প্রচুর পানি ও তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ড. মাহরুফ বলেন, এই সময় অনেকেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করেন, যা শরীরের পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া থামিয়ে দিতে পারে। সুতরাং, সঠিক খাবারের পরিমাণ গ্রহণ করতে হবে, যাতে শরীর আবার পূর্ণ শক্তি ফিরে পায়।

আট থেকে পনেরো রোজা: শরীরের পুনঃনির্মাণ

এই পর্যায়ে শরীর রোজার সাথে পুরোপুরি মানিয়ে যায়। শরীর তার নিজস্ব নিরাময় প্রক্রিয়া শুরু করে, যা শরীরের সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং পুনর্গঠনকে সহায়তা করে। শরীর তখন পরিপূর্ণভাবে তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়। তবে, ক্যালোরির অতিরিক্ত গ্রহণ আবার এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে পারে, তাই সঠিক নিয়ম মেনে খাবার গ্রহণ করা জরুরি।

ষোল থেকে ত্রিশ রোজা: শুদ্ধি ও শক্তি

রমজানের শেষার্ধে, শরীর পুরোপুরি রোজার নিয়মে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। কোলন, লিভার, কিডনি ও ত্বক নিজেদের পরিশোধনের কাজে লিপ্ত হয়ে যায়, যা শরীরকে শুদ্ধ করে। এই সময় স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধি পায়, এবং শরীর তার পূর্ণ শক্তি ফিরে পায়। তবে, দীর্ঘ সময় রোজা রাখলে শরীর ‘স্টারভেশন মোড’-এ চলে যেতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং, মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে হবে।

রোজার পরেও উপকারী নিয়মিত রোজা

ড. মাহরুফ বলেন, রোজা পালনের উপকারিতা শুধু রমজান মাসেই সীমাবদ্ধ নয়। সুস্থ থাকার জন্য রোজা নিয়মিতভাবে পালন করা উচিত। সপ্তাহে দুই দিন রোজা রাখা শরীরকে চাঙ্গা ও সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এটি শরীরের শক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

রমজান মাসে রোজা রাখার আধ্যাত্মিক উপকারিতার পাশাপাশি, শরীরের উপকারিতাও অসীম। শরীরের শক্তি ও মনোযোগের উন্নতি, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে রোজার ভূমিকা অনস্বীকার্য। সঠিক নিয়মে রোজা পালনের মাধ্যমে শরীর তার সেরা অবস্থানে পৌঁছাতে পারে, এবং সুস্থতার পথ সহজ হয়ে ওঠে। তাই, শুধু রমজান মাসেই নয়, নিয়মিত রোজা পালন করলে শরীর সুস্থ ও চাঙ্গা থাকবে, যা জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে।

মো: রাজিব আলী/

ধর্ম - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ