ঢাকা, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

পাতি নেতাদের অপকর্মে অস্বস্তিতে বিএনপি

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মার্চ ১৫ ১১:২৫:০১
পাতি নেতাদের অপকর্মে অস্বস্তিতে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: সুজানগরে বিএনপির একাংশের লাগামহীন কর্মকাণ্ডে দিশেহারা স্থানীয় বাসিন্দারা। ডাকাতি, চাঁদাবাজি, দখলদারি এবং অবৈধ বালু উত্তোলনের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন দলটির কিছু পাতি নেতা। শুধু তাই নয়, এক সময় আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থাকা অপরাধীরাও এখন বিএনপির ছত্রছায়ায় থেকে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে বিব্রত বিএনপির তৃণমূল থেকে শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যন্ত। দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।

স্বর্ণের দোকানে প্রকাশ্য ডাকাতি

প্রায় পাঁচ মাস আগে প্রকাশ্য দিবালোকে সুজানগর পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বাবু খাঁ এবং বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মানিক খাঁর নেতৃত্বে কয়েকজন স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি চালায়। তাদের প্রভাব এতটাই বেশি যে, ভুক্তভোগী দোকান মালিক থানায় অভিযোগ করতেও সাহস পাননি। সম্প্রতি, এই ডাকাতির সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অপরাধের ঘাঁটিতে পরিণত সুজানগর

স্থানীয়দের অভিযোগ, বাবু-মানিক চক্রের মতো প্রায় এক ডজন বিএনপি নেতাকর্মী সুজানগরে অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হাইব্রিড নেতা, যারা একসময় আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে দখলদারি ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ছিল। এখন বিএনপির ব্যানারে থেকে একই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে হামলা

সম্প্রতি, বাবু, মানিক, মজিবুর খাঁ (২) এবং বাঁশিসহ তাদের অনুসারীদের হাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে জামায়াতের চার নেতা মারধরের শিকার হন। ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেছেন, যেখানে প্রধান আসামি করা হয়েছে মজিবুর (২), বাবু, মানিক, বাঁশি এবং আরিফ শেখকে।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অপরাধের নতুন রূপ

সুজানগর একসময় বিএনপির শক্ত ঘাঁটি ছিল। তবে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় এলাকায় তাদের প্রভাব বাড়ে। গ্রুপিংয়ের কারণে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায় এবং সে সুযোগে বিএনপির কিছু নেতাকর্মী অবৈধ বালু ব্যবসা, চাঁদাবাজি এবং জমি দখলের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এসব অপকর্মের মূল হোতা হিসেবে উঠে এসেছে বিএনপির কয়েকজন নেতার নাম, যারা অতীতে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় ছিল। ক্ষমতার পরিবর্তনের পর তারা বিএনপির ব্যানারে নিজেদের অপরাধ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

কারা রয়েছে এই অপরাধ চক্রের সঙ্গে?

সুজানগরের তাঁতিবন্দ ইউপির সাবেক সদস্য বিএনপি নেতা মজিবর খাঁ (১), উপজেলা বিএনপির সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মজিবর খাঁ (২), বিএনপি নেতা কামাল শেখ, পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বাবু খাঁ, বিএনপি নেতা মানিক খাঁ এবং লেবু খাঁ—এদের বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য অপকর্মের অভিযোগ।

বিশেষ করে, বাবু খাঁ এবং মানিক খাঁ এক সময় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পট পরিবর্তনের পর তারা বিএনপির ছত্রছায়ায় ঢুকে একের পর এক সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যুবদল নেতা বাবু খাঁ ও আব্দুল বাসেত বাঁশি সুজানগর পৌর বিএনপির সভাপতি কামাল হোসেন বিশ্বাসের অনুসারী বলে জানা গেছে। অপরদিকে, মজিবুর খাঁ (২) এবং মানিক খাঁ সাবেক উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল হালিম সাজ্জাদের অনুগত।

দলে বিভ্রান্তি, শীর্ষ নেতাদের উদ্বেগ

বিএনপির শীর্ষ নেতারা এসব নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ডে চরম বিব্রত। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবিএম তৌফিক হাসান আলহাজ জানান, দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া জরুরি। বিএনপি নেতা কামাল শেখ, মজিবুর রহমান (১) ও (২) তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অন্যদিকে, সুজানগর থানার ওসি মজিবুর রহমান বলেন, "স্বর্ণের দোকানে হামলার ঘটনায় ডাকাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি, বরং এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল।" তবে ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বাবু ও মানিক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে হাতুড়ি দিয়ে মারধর করছে।

বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অপরাধীদের প্রশ্রয় ও দলে অনুপ্রবেশকারীদের দৌরাত্ম্য নিয়ে এখন কঠিন সময় পার করছে সুজানগর বিএনপি। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনগণের আস্থা ফেরাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তুলেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

ফারুক/

জাতীয় - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ