ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১

মাগুরার নিষ্পাপ শিশুটির মৃত্যুর নৃশংসতা: ফাঁসির দাবিতে উত্তাল জনমত

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মার্চ ১৪ ১৪:১৫:২২
মাগুরার নিষ্পাপ শিশুটির মৃত্যুর নৃশংসতা: ফাঁসির দাবিতে উত্তাল জনমত

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাগুরার এক নিষ্পাপ শিশুর হাস্যোজ্জ্বল শৈশব আজ এক হৃদয়বিদারক স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে। আট বছরের শিশুটি, যার জীবন ছিল আনন্দে পূর্ণ, আজ তার স্মৃতি ঘিরে কাঁদছে তার পরিবার এবং গোটা গ্রাম। ৫ মার্চ, শিশুটি বেড়াতে গিয়েছিল মাগুরার বোনের বাড়িতে। কেউ ভাবতেও পারেনি, সেই সফরই তার জীবনের শেষ সফর হয়ে দাঁড়াবে। গভীর রাতে ঘটে এক মর্মান্তিক ঘটনা, যার ফলে শিশুটি নির্মমভাবে নিহত হয়।

নৃশংসতার বিভীষিকা

শিশুটি যখন বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল, তখন সে ভয়াবহ নৃশংসতার শিকার হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থা অবনতি হওয়ায় তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেও আশার আলো ম্লান হলে, শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হলেও, শনিবার বিকেল নাগাদ তার মৃত্যু ঘটে।

আরও পড়ুন:

আছিয়ার বোন: সেই রাতে শাশুড়ি আমার খাবারে ঘুমের ওষুধ দিছিল

আছিয়ার ধ/র্ষক দুলাভাই কে নিয়ে তথ্য দিলেন তার শ্রেণী শিক্ষক মাহফুজ

সেই রাতে যা ঘটেছিল জানালেন আছিয়ার মা

আছিয়ার শেষ স্বীকারোক্তি: আছিয়া নিজে বলে গেছে ধ/র্ষণ করেছে কে (ভিডিওসহ)

মৃত্যুর পর, সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে শিশুটির মরদেহ মাগুরায় নিয়ে আসা হয়। হৃদয়বিদারক পরিবেশে শহরের নোমানী ময়দানে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে শ্রীপুর উপজেলার শব্দালপুর ইউনিয়নের জারিয়া গ্রামে দ্বিতীয় জানাজার পর সোনাইকুন্ডি কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

এই নৃশংস ঘটনায়, গ্রামসহ গোটা মাগুরা জনরোষে ফেটে পড়েছে। শিশুটির মা অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বড় বোনের চোখের জলও থামছে না, আর প্রতিবন্ধী বাবা নির্বাক হয়ে বসে আছেন, যেন শোকের বোঝা তাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।

মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব আলী জানিয়েছেন, শিশুটির মা বাদী হয়ে তার ভগ্নিপতি হিটু শেখ এবং তার দুই ছেলে সজীব শেখ ও রাতুল শেখের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ দ্রুত তৎপরতা চালিয়ে তিনজন আসামিকেই গ্রেপ্তার করেছে। আদালতের নির্দেশে, হিটু শেখকে সাত দিনের এবং তার দুই ছেলেকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় গোটা দেশ

শুধু পরিবার নয়, গোটা মাগুরা, এমনকি সমগ্র দেশ এই ঘটনার ন্যায়বিচার চায়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি তুলেছে। দেশবাসী আশা করছে, এ ঘটনার পর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার সম্পন্ন হবে এবং দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।

বাংলাদেশের আইন এবং সম্ভাব্য শাস্তি

বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, শিশু ধর্ষণ ও হত্যার অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) অনুযায়ী, যদি ধর্ষণের শিকার শিশু মারা যায়, তাহলে অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড বা আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে। দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ৩০২ ধারা অনুযায়ী, ধর্ষণের ফলে শিশুটির মৃত্যু হলে, অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড বা আজীবন কারাদণ্ড হতে পারে।

এছাড়া, ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হতে পারে।

এই মামলায়, যদি হিটু শেখ এবং তার দুই ছেলে দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তারা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং তীব্র আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও দৃঢ় মনোভাব পোষণ করে অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

শিশুটির হাস্যোজ্জ্বল মুখ আজ শুধুই কষ্টের প্রতিচ্ছবি। তার প্রতি ঘটে যাওয়া এই বর্বরতার যথাযথ বিচারই হবে তার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন। এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় একটাই দাবি— অপরাধীদের ফাঁসি হোক।

মো: রাজিব আলী/

জাতীয় - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ