ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি: বিশ্ববাজারে অস্থিরতা, যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় পতন

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মার্চ ১১ ১২:৫০:৪৯
ট্রাম্পের শুল্ক নীতি: বিশ্ববাজারে অস্থিরতা, যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় পতন

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যখন পরিবর্তনের পথে, তখন তার নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি পড়ে শেয়ারবাজারে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক চিত্রে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, এবং এর প্রভাব স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ার শেয়ারবাজারে। বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে উদ্বেগ এবং বিশ্লেষকদের শঙ্কা প্রবল হওয়ায় শেয়ারবাজারে ব্যাপক ধস নেমেছে।

ট্রাম্প নিজে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, “বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি এখন একটি পরিবর্তনকাল পার করছে, তাই শেয়ারবাজারের এই পতন অত্যন্ত স্বাভাবিক।” গত রবিবার তাঁর বক্তব্যের পর, শেয়ারবাজারে এই পতন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। আর তারপর থেকেই মার্কিন কর্মকর্তারা এবং উপদেষ্টারা বিনিয়োগকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন। তবে, তাদের এই প্রচেষ্টা সফল হতে দেখা যায়নি।

ফক্স নিউজে গত বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, “আমি ভবিষ্যদ্বাণী করতে পছন্দ করি না, কিন্তু বর্তমানে আমরা একটি পরিবর্তনের সময় পেরোচ্ছি, আমরা আমেরিকার সম্পদ ফিরিয়ে আনছি, এবং এটি একটি বড় দিক।”

এদিকে, আজ মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দিনের প্রথম দিকেই জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার শেয়ারবাজারে বড় পতন দেখা গেছে। জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ২ দশমিক ৫ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি ২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স ২০০ সূচক ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। এর আগে, নিউইয়র্ক শেয়ারবাজারে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ২ দশমিক ৭ শতাংশ কমে গেছে, ডাও জোন্স ২ শতাংশ এবং ন্যাসডাক ৪ শতাংশ পতন দেখেছে।

বিশ্ববাজারে ব্যাপক ধসের সাথে সাথে প্রযুক্তি খাতও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টেসলা শেয়ার ১৫.৪ শতাংশ, নাভিদিয়া শেয়ার ৫ শতাংশ এবং মেটা, অ্যামাজন ও অ্যালফাবেটের শেয়ার মূল্যও তীব্রভাবে কমেছে।

এ সম্পর্কে কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, “ট্রাম্পের শুল্ক নীতি একদিকে রাজনৈতিক নেতাদের ভবিষ্যত পদক্ষেপ সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছে, তবে অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের মনে ভয় সৃষ্টি করছে, যা বাজারে অস্থিরতার সৃষ্টি করছে।” তাঁর মতে, "বাজারের পতন সম্ভবত একটি মানসিকতা সৃষ্টির ফল, যেখানে ব্যবসায়ীরা নিজেদের রক্ষা করতে তৎপর হয়ে ওঠে।"

হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন যে, শুল্ক নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং উৎপাদন পুনরায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেশাই এক বিবৃতিতে বলেন, “শিল্প নেতারা ট্রাম্পের এজেন্ডার প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন এবং শুল্কসহ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”

সর্বশেষ, অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ এল-এরিয়ান মন্তব্য করেন, “প্রথম দিকে বিনিয়োগকারীরা ট্রাম্পের কর ছাড় এবং নিয়ন্ত্রণ শিথিলের উদ্যোগে আশাবাদী ছিলেন, তবে এখন তারা বুঝতে পারছেন যে, শুল্ক নীতি বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বাড়াতে পারে, যা মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে।”

এদিকে, ট্রাম্প চীন, মেক্সিকো ও কানাডাকে অবৈধ মাদক এবং অভিবাসীদের প্রবাহ বন্ধ করতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ না নেয়ার অভিযোগ এনে শুল্ক আরোপ করেছেন। তবে এই তিনটি দেশ ট্রাম্পের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিশ্ববাজারে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তার মধ্যে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে উঠেছে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি মার্কিন অর্থনীতির জন্য একদিকে যেমন সুযোগ সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক পরিবেশে অস্থিরতা ও উদ্বেগের সৃষ্টি করছে।

ফারুক খান/

বিশ্ব - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ