ঢাকা, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১

খাদিজা-আসিফ নজরুল বিতর্কে সামনে এলো নতুন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মার্চ ১০ ১১:১৬:৩৭
খাদিজা-আসিফ নজরুল বিতর্কে সামনে এলো নতুন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: "আমি শুধু একটি নাম, কিন্তু আমার কণ্ঠস্বর থেমে থাকবে না,"—এভাবেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরা তার বিতর্কিত বক্তৃতা শুরু করেন। এই তরুণী, যিনি ২০১৯ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৫ মাস কারাভোগ করেছিলেন, সম্প্রতি তার অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন। খাদিজা তার বক্তব্যে দাবি করেন, সরকারের শাসনব্যবস্থা, বিশেষত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার, একটি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিপদগ্রস্ত।

খাদিজা তার বক্তৃতায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেন, বলেছিলেন, “আমাকে একটি উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে, যেনো বলা হয়, যে কোনো মেয়ে—শিক্ষার্থী হলেও—যদি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাকে গায়ের ওপর আঘাত সহ্য করতে হবে।” তার ভাষায়, "সরকারের শাসন এখন ফ্যাসিস্ট শাসন হয়ে গেছে, আর আমার ওপর যে নৃশংসতা করা হয়েছে, তা ফ্যাসিজমের সবচেয়ে বাজে উদাহরণ হতে পারে।"

এখন প্রশ্ন উঠেছে, খাদিজার বক্তব্যে যে প্রধান অভিযোগ ছিল তা হচ্ছে সরকারের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের প্রতি তার ক্ষোভ। খাদিজা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমরা স্টুডেন্টরা বিশ্বাস করে আজকের উপদেষ্টাদের বসিয়েছি। কিন্তু যদি আসিফ নজরুল স্যার বিচারগুলো সঠিকভাবে না করতে পারেন, তাহলে আপনি নেমে যান।” তার এই মন্তব্য শুধু আসিফ নজরুলের দায়িত্বহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে না, বরং সরকারের প্রতি তার অবিশ্বাসের গভীর প্রমাণ হিসেবে দাঁড়ায়।

খাদিজা আরও এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেন, ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় মেজর দেলোয়ারের সঙ্গে একটি লাইভ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে "ফ্যাসিস্ট" বলে মন্তব্য করার পর তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে দুই বছর পর, তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং গ্রেপ্তার করার ঘটনা এক প্রশ্নের জন্ম দেয়—"কেন তখন হয়নি, আর কেন এখন?" খাদিজা বলেন, "এটি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালানো মামলা, যার পেছনে সরকারের অপ্রকাশিত উদ্দেশ্য ছিল।"

নারী দিবসের প্রসঙ্গে খাদিজা বলেন, "সমতা মানে শুধু পুরুষদের মতো হওয়া নয়, বরং নারীদের ইসলাম অনুযায়ী যথাযোগ্য সম্মান ও অধিকার দেওয়া উচিত।" এর মাধ্যমে তিনি নারীদের প্রকৃত মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানালেন।

অবশেষে, খাদিজা সরকারের পতনের পর যে বিচারহীনতা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “সরকার বদলেছে, কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এখনো রয়েছে, এবং যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ রয়েছে, তাদের বিচার হচ্ছে না।"

তিনি অব্যাহত নারী নির্যাতন এবং শিশু ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “কখনও কখনও নারীরা এমন আন্দোলনে অংশ নেন না, যেখানে তাদের থাকা প্রয়োজন।” এই বক্তব্যটি একদিকে যেমন নারীর অধিকার রক্ষার কথা বলে, তেমনি সমাজের সংকটময় সময়ে নারীদের সক্রিয় ভূমিকা রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপরও আলোকপাত করে।

খাদিজার বক্তব্যে উঠে এসেছে একদম নতুন রাজনৈতিক প্রশ্ন—ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কি আসলেই দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, নাকি এটি সরকার বিরোধীদের দমন করার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে? এই বিতর্কের পেছনে রয়েছে একটি বড় ধরনের সামাজিক এবং রাজনৈতিক লড়াই, যা শুধু আইন ও শাসনব্যবস্থা নিয়ে নয়, বরং দেশের ভবিষ্যৎও নির্ধারণ করতে পারে।

তারেক কবির/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ