ছাত্রদল, শিবির, ও এনসিপির আয়ের উৎস প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি, যেটি কখনো উত্তাল হয়ে ওঠে, কখনো শান্ত থাকে, তার আয়ের উৎসের প্রশ্ন নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল, জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত ছাত্রশিবির এবং গণ অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতাদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অর্থের উৎস নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু এখন একটাই প্রশ্ন – "অর্থের উৎস কোথায়?"
ছাত্রদল: বিএনপি পরিবারের সান্নিধ্যে অর্থের স্রোত
শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ছাত্রদলটি ছিল প্রায় নির্বাসিত। ক্ষমতার পালাবদলের পরেই ছাত্রদল আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে, কিন্তু তাদের শুরুর দিনগুলো ছিল কিছুটা বাধাগ্রস্ত। ছাত্রলীগের প্রভাবের কারণে ছাত্রদল প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারেনি। তবে, ছাত্রদলের নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছিল, তা একদম নতুন ছিল না— চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায়।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম সম্প্রতি জানিয়েছেন, দলের অর্থ সংগৃহীত হচ্ছে মূলত দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তারেক রহমানের গঠিত ‘বিএনপি পরিবার’ নামক সংগঠন থেকে। এছাড়া, সাবেক নেতৃবৃন্দ নিজেদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে দলের প্রোগ্রামগুলোর জন্য অর্থ প্রদান করেন। তাদের ভাষায়, এই অর্থই ছাত্রদলের নতুন প্রজন্মের রাজনীতির রূপকথা লিখতে সাহায্য করছে।
শিবির: স্বেচ্ছায় দান এবং প্রকাশনার মুনাফা
একদিকে ছাত্রদল, অন্যদিকে ছাত্রশিবির। ছাত্র শিবিরও সম্প্রতি বৃহৎ আকারে কিছু কর্মসূচি আয়োজন করেছে, যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল ইফতার বিতরণ। তবে শিবিরের আয়ের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন উঠলে, তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, “আমরা আমাদের সদস্যদের কাছ থেকে স্বেচ্ছায় দান পাই এবং আমাদের প্রাক্তনরা নিয়মিত ‘এয়ানত’ (দান) প্রদান করেন।” এর পাশাপাশি, শিবিরের আয়ের আরেকটি উৎস হলো তাদের প্রকাশনা সামগ্রীর বিক্রির মুনাফা।
এনসিপি: তরুণ পেশাজীবীদের দানে ভরসা
গণ অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতাদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সমাবেশের খরচ নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। এনসিপির পক্ষ থেকে তাদের আয়ের উৎস নিয়ে কোনো স্পষ্ট তথ্য প্রকাশ করা হয়নি, তবে তারা দাবি করছে, দলটি মূলত তরুণ পেশাজীবীদের কাছ থেকে ডোনেশন পেয়ে থাকে। তবে, এই দাবি নিয়ে বিতর্ক চলছেই, কারণ জনগণের বিশ্বাসে দোলা দিয়েছে এই সংগঠনের অর্থের উৎস।
বিশ্লেষকরা কী বলছেন?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনগুলো, বিশেষ করে বিএনপি এবং জামায়াতের সমর্থিত ছাত্র সংগঠনগুলো, প্রায়শই রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হিসেবে চাঁদাবাজি এবং অর্থ সংগ্রহের ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মন্তব্য করেছেন, "চাঁদাবাজি এখন প্রকটভাবে চলছে। ক্ষমতার পরিবর্তনে শুধু ব্যানারের পরিবর্তন হয়েছে, চাঁদাবাজি সংস্কৃতির পরিবর্তন হয়নি।" একই মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, যিনি বলেছেন, "বাংলাদেশে নির্বাচনি তহবিল কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো চালানোর তহবিল প্রধানত আসে চাঁদাবাজির মাধ্যমে।"
রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন:
রাজনীতির সংস্কৃতির বদল প্রয়োজন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আয়-ব্যয়ের হিসাবের স্বচ্ছতা আনার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। রাজনৈতিক পরিবেশে পরিবর্তন আনতে হলে প্রথমত রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের আয় ও খরচের হিসাব জনগণের কাছে খোলাসা করতে হবে। এই স্বচ্ছতা জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে সাহায্য করবে এবং রাজনীতির আঙ্গিকে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে।
বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি, যা রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও এক অদৃশ্য অন্ধকারে আটকে থাকে, তার আয় ও খরচের তথ্যের স্বচ্ছতা সুনিশ্চিত করার জন্য একটি নৈতিক দায়িত্ব। চাঁদাবাজি সংস্কৃতির পরিবর্তন এবং প্রকৃত রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা হতে পারে তখনই, যখন ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের অর্থের উৎসকে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরবে। জনগণ তখনই তাদের প্রতি আস্থা রাখতে সক্ষম হবে, যখন তারা তাদের রাজনীতির স্বচ্ছতা প্রমাণ করবে।
করিম/
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বিসিবির নতুন কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ ৫ জন
- প্যারোলে মুক্তি পেল আওয়ামী লীগ নেতা
- নির্বাচনী আসন ভাগাভাগি করলো এনসিপির প্রার্থীরা
- মেহেদী হাসান মিরাজের নতুন নাম দিল আইসিসি
- সুখবর: দীর্ঘ অপেক্ষার পর আরব আমিরাতের ভিসা চালু
- নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে ৩ ক্রিকেটার
- বিনিয়োগকারীদের মাঝে আতঙ্ক, জরুরি পদক্ষেপ নিলেন ডিএসই চেয়ারম্যান
- শান্ত বাদ, তবে নতুন অধিনায়ক মিরাজ নয়
- শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা
- শেখ হাসিনা ও মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের তুলসীর বৈঠক নিয়ে যা জানা গেল
- আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা সরাসরি জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
- দুই আসন থেকে নির্বাচন করবেন নাহিদ ইসলাম
- আজকের সৌদি রিয়াল রেট বিনিময় হার
- আজ বাড়লো সৌদি রিয়াল রেট বিনিময় হার
- বড় সুখবর পেল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা