ঢাকা, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ম্যাচ সেরা ও টূর্নামেন্ট সেরা নির্বাচিত হলেন যারা

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মার্চ ০৯ ২২:৪৭:৪৩
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ম্যাচ সেরা ও টূর্নামেন্ট সেরা নির্বাচিত হলেন যারা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এক রোমাঞ্চকর ফাইনালে নিউ জিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এর শিরোপা জয় করেছে ভারত। টার্গেট ছিল ২৫২ রান, ম্যাচের শেষ ওভারে হাতে ছিল ৬ বল, ক্রিজে ছিলেন কেএল রাহুল ও রবীন্দ্র জাদেজা। ভারতীয় দলের দুর্দান্ত ব্যাটিং পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে ইতিহাস গড়া জয়।

নিউ জিল্যান্ডের ইনিংস: ব্যাটিংয়ে ধীরগতির শুরু, শেষের ঝড়

টস জিতে ব্যাটিং নেয় নিউ জিল্যান্ড। ওপেনিং জুটিতে ভালো শুরু করলেও ভারতীয় স্পিনারদের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের সামনে ধীর হয়ে পড়ে তাদের রান তোলার গতি। ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ২৫১ রান সংগ্রহ করে তারা।

রাচিন রাভিন্দ্রা ৩৭ বলে ৩৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন, তবে কুলদীপ যাদব তাকে বোল্ড করে পথ আটকে দেন। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৩ রান করেন ড্যারিল মিচেল, যদিও তার ইনিংস ছিল অপেক্ষাকৃত ধীরগতির (১০১ বলে)। শেষদিকে মাইকেল ব্রেসওয়েল মাত্র ৪০ বলে ৫৩ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন, যা কিউইদের প্রতিযোগিতামূলক স্কোর এনে দেয়।

ভারতের বোলারদের মধ্যে কুলদীপ যাদব ১০ ওভারে ৪০ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। বরুণ চক্রবর্তীও সমানসংখ্যক উইকেট নেন ৪৫ রান খরচায়। রবীন্দ্র জাদেজা ছিলেন সবচেয়ে কৃপণ, ১০ ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়ে তুলে নেন ১ উইকেট।

রোহিতের দুর্দান্ত শুরু, রাহুলের ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশিং

২৫২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন। তিনি ৭৬ বলে ৮৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে শক্ত ভিত গড়ে দেন। তার সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে শুভমান গিল ৩১ রান করেন এবং দুজনে মিলে গড়েন ১০৫ রানের পার্টনারশিপ। তবে গিল আউট হওয়ার পর দ্রুতই বিদায় নেন বিরাট কোহলি (১)।

এরপর শ্রীয়ারস আয়ার ৬২ বলে ৪৮ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেন, তার সঙ্গে ছিলেন অক্ষর প্যাটেল (২৯)। কিন্তু ম্যাচ যখন কঠিন হয়ে যাচ্ছিল, তখন কেএল রাহুল ও হার্দিক পান্ডিয়া দলকে স্থিতিশীল করেন। পান্ডিয়া ১৮ রান করে আউট হলেও রাহুল শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ৩৪ রান করে ভারতকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। রবীন্দ্র জাদেজা অপরাজিত থাকেন ৯ রানে।

নিউ জিল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন মিচেল স্যান্টনার (১০ ওভারে ৪৬ রানে ২ উইকেট) ও মাইকেল ব্রেসওয়েল (১০ ওভারে ২৮ রানে ২ উইকেট)। তবে ও’রউর্ক (৭ ওভারে ৫৬ রান) ও নাথান স্মিথ (২ ওভারে ২২ রান) ছিলেন বেশ ব্যয়বহুল।

ফাইনালের সংক্ষিপ্ত স্কোর

নিউ জিল্যান্ড: ২৫১/৭ (৫০ ওভার) – ড্যারিল মিচেল ৬৩, মাইকেল ব্রেসওয়েল ৫৩*, বরুণ চক্রবর্তী ২/৪৫, কুলদীপ যাদব ২/৪০।

ভারত: ২৫৪/৬ (৪৯ ওভার) – রোহিত শর্মা ৭৬, শ্রীয়ারস আয়ার ৪৮, কেএল রাহুল ৩৪*, মিচেল স্যান্টনার ২/৪৬, মাইকেল ব্রেসওয়েল ২/২৮।

ফল: ভারত ৪ উইকেটে জয়ী।

রোহিত শর্মার প্রতিক্রিয়া

শিরোপা জয়ের পর উচ্ছ্বসিত ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন,

"এটা অসাধারণ অনুভূতি। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি, আর আজ আমাদের চেষ্টার ফলাফল আমাদের পক্ষেই গেছে।"

নিজের ব্যাটিং স্টাইল নিয়ে তিনি আরও বলেন,

"এটা আমার স্বাভাবিক খেলা নয়, কিন্তু আমি এটা করতে চেয়েছিলাম। যখন কিছু নতুন করতে চান, তখন দলের সমর্থন দরকার হয়। আমি শুরুতে রাহুল ভাইয়ের (দ্রাবিড়) সঙ্গে কথা বলেছিলাম, আর এখন গৌতি ভাইয়ের (গৌতম গম্ভীর) সঙ্গেও আলোচনা করেছি। আমি সবসময় একভাবে খেলেছি, কিন্তু এবার নতুন কৌশলে সফল হয়েছি।"

শুরুর কয়েক ওভারে নিজের পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেন রোহিত,

"পিচের ধরন বুঝে আমি পাঁচ-ছয় ওভারের পরিকল্পনা খুব পরিষ্কার রেখেছিলাম। আগে কখনো কখনো আউট হয়েছি, কিন্তু সঠিকভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাটাই আসল। দলের গভীর ব্যাটিং লাইনআপ আমাকে স্বাধীনতা দেয়, যা খুব সাহায্য করে। জাদেজা ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নামছে, এটা জানলে সামনে থেকে আক্রমণ করতে আরও আত্মবিশ্বাস পাই।"

টুর্নামেন্ট সেরা রাচিন রাভিন্দ্রা

পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন নিউ জিল্যান্ডের রাচিন রাভিন্দ্রা। তার ব্যাটিং ও বোলিং অলরাউন্ড পারফরম্যান্স ফাইনাল পর্যন্ত কিউইদের টেনে এনেছিল।

ভারতের আরও এক ইতিহাস গড়া শিরোপা

এই জয়ের মাধ্যমে ভারতীয় দল আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে প্রতিটি মহাদেশের দলের বিপক্ষে জয় পাওয়া প্রথম দল হয়ে গেল।

১) ১৯৮৩ বিশ্বকাপ – ওয়েস্ট ইন্ডিজ (আমেরিকা মহাদেশ)

২) ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ – পাকিস্তান (এশিয়া মহাদেশ)

৩) ২০১১ বিশ্বকাপ – শ্রীলঙ্কা (এশিয়া মহাদেশ)

৪) ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি – ইংল্যান্ড (ইউরোপ মহাদেশ)

৫) ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ – দক্ষিণ আফ্রিকা (আফ্রিকা মহাদেশ)

৬) ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি – নিউ জিল্যান্ড (ওশেয়ানিয়া মহাদেশ)

ভারতের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এবং রোহিত শর্মার নেতৃত্বে এই জয়ের মাধ্যমে তারা আরও একটি আইসিসি ট্রফি ঘরে তুলল, যা তাদের আধিপত্যের প্রমাণ দিচ্ছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ