ঢাকা, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১

বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতীয় সেনাপ্রধানের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মার্চ ০৯ ১০:৫১:২২
বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতীয় সেনাপ্রধানের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুই দেশের সম্পর্ক কখনো শুধুই কূটনীতির পরিসরে আবদ্ধ থাকে না—বিশেষ করে যখন বিষয়টি বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দুটি ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে হয়। সামরিক সহযোগিতা, আস্থার বিনিময় এবং ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী সম্প্রতি নতুন কিছু দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন।

শনিবার (৮ মার্চ) ভারতের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে আয়োজিত ‘ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভ’-এ তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক অত্যন্ত দৃঢ়। আমরা নিয়মিত তথ্য ও নোট বিনিময় করি, যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি না হয়।” তার এই মন্তব্য দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্কের শক্ত অবস্থানকেই তুলে ধরে।

দ্বিমুখী হুমকি ও প্রতিবেশী সম্পর্কের জটিলতা

কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি কি এতটাই সরল? ভারতকে একদিকে সামলাতে হয় চীনকে, অন্যদিকে পাকিস্তানকেও। এই দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতার বিষয়টি ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য উদ্বেগের কারণ বলেই মনে করেন জেনারেল দ্বিবেদী। তিনি বলেন, “দুই দেশের মধ্যে উচ্চমাত্রার সহযোগিতা রয়েছে, যা আমাদের মেনে নিতে হবে। পাকিস্তানের অধিকাংশ সামরিক সরঞ্জাম চীনের তৈরি। তাই দ্বিমুখী হুমকি এখন বাস্তবতা।”

শুধু তাই নয়, সন্ত্রাসবাদ নিয়েও তার কণ্ঠে শঙ্কার সুর ছিল স্পষ্ট। তিনি জানান, ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে নিহত সন্ত্রাসীদের ৬০ শতাংশ পাকিস্তানের নাগরিক, আর উপত্যকায় সক্রিয় সন্ত্রাসীদের ৮০ শতাংশই পাকিস্তান থেকে আসা।

বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি

ভারতীয় সেনাপ্রধান যখন বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক সম্পর্কের দৃঢ়তার কথা বলছেন, তখনই এক প্রশ্ন উঠে আসে—তৃতীয় কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা কি ভারতের জন্য উদ্বেগের?

এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “একটি নির্দিষ্ট দেশ সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রবিন্দু। যদি সেই দেশ আমার কোনো প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে, তবে উদ্বিগ্ন হওয়া স্বাভাবিক। কারণ, সেই দেশের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের পথ ব্যবহৃত হতে পারে।” যদিও তিনি কোনো দেশের নাম নেননি, তবে আভাস স্পষ্ট।

এছাড়া, বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের ফলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে পরিবর্তন আসবে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি সতর্ক অবস্থান নেন। তার মতে, এখনই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া “খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।” তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে এবং নিয়মিত যোগাযোগের ফলে কোনো ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নেই।

ভারতের প্রস্তুতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ভারত যে তার প্রতিরক্ষা কৌশলে কোনো শিথিলতা আনতে রাজি নয়, সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, “আমরা সব সময় প্রস্তুত। আমরা দৃঢ় থাকব, তবে আক্রমণাত্মক হব কেবল তখনই, যখন আমাদের বাধ্য করা হবে।” একইসঙ্গে তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষেও মত দেন এবং পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রবিন্দু’ থেকে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার আহ্বান জানান।

এক সম্পর্ক, বহু বাস্তবতা

ভারত ও বাংলাদেশের সামরিক সম্পর্ক একদিকে যেমন আস্থার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে, অন্যদিকে ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা এটিকে আরও জটিল করে তুলছে। বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনা করবে—এটাই স্বাভাবিক। একইভাবে, ভারতও তার নিরাপত্তা স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে।

তবে ইতিহাস বলছে, দুদেশের সম্পর্কের ভিত মজবুত। তাই পারস্পরিক বোঝাপড়া ও কৌশলগত সহযোগিতাই ভবিষ্যতে দুই দেশের বন্ধন আরও দৃঢ় করবে।

জামাল/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ