ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১

রোজাদারের জন্য সুন্নত আমল: রমজান মাসে বরকতপূর্ণ ইবাদত

২০২৫ মার্চ ০৬ ১২:১০:৫৩
রোজাদারের জন্য সুন্নত আমল: রমজান মাসে বরকতপূর্ণ ইবাদত

নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান মাস ইসলামি বর্ষপঞ্জির সবচেয়ে পবিত্র ও বরকতময় সময়। এই মাসে রোজা রাখা ফরজ ইবাদত হলেও এর পাশাপাশি কিছু সুন্নত ও মুস্তাহাব আমল রয়েছে, যা একজন রোজাদারকে আল্লাহর কাছে আরও কাছে নিয়ে যায় এবং বিশেষ সওয়াব অর্জনের সুযোগ দেয়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, "বনি আদমের প্রতিটি কাজের সওয়াব তার জন্য, তবে রোজা ব্যতীত; রোজা আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দিব।" (সহিহ বুখারি) রোজার মাসে এই সুন্নত আমলগুলো পালন করা একাধিক সওয়াবের দ্বার উন্মুক্ত করে।

১. তারাবি নামাজ: রাতের বিশেষ ইবাদত

রমজান মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হলো তারাবি নামাজ। এই বিশেষ নামাজ এশার পর আদায় করা হয়, এবং তার মাধ্যমে অতীতের গুনাহ মাফ হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে তারাবি নামাজ আদায় করে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করা হয়।" (বুখারি) তারাবি নামাজের মাধ্যমে একজন রোজাদার রাতের সময়কে আল্লাহর ইবাদতে ব্যয় করতে পারেন, যা তার আত্মশুদ্ধি ও ক্ষমা লাভের একটি মাধ্যম।

২. সাহরি খাওয়া: বরকতের প্রাপ্তি

রোজা রাখার জন্য সাহরি খাওয়া সুন্নত। এটি একটি বরকতময় আমল, যা রোজাদারকে শক্তি দেয় এবং রোজার ইবাদতকে আরও সহজ করে তোলে। সাহরি খাওয়ার ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, "তোমরা সাহরি খাও, কারণ সাহরিতে বরকত আছে।" (বুখারি) এটি শুধু খাবার নয়, বরং রোজার জন্য একটি বিশেষ প্রস্তুতি যা আল্লাহর রহমত অর্জনে সহায়ক।

৩. ইফতার: তাড়াতাড়ি করো, কল্যাণের পথে থাকো

রমজান মাসে ইফতার করার সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসুল (সা.) বলেছেন, "মানুষ যতদিন তাড়াতাড়ি ইফতার করবে, ততদিন কল্যাণে থাকবে।" (বুখারি) ইফতার করার সময়ে কাঁচা খেজুর বা শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। যদি খেজুর না পাওয়া যায়, তাহলে পানি দিয়ে ইফতার করা যেতে পারে। ইফতারটি হওয়া উচিত সূর্যাস্তের সাথে সাথে, যাতে শরীর দ্রুত প্রয়োজনীয় শক্তি ফিরে পায় এবং রোজাদারের আত্মা প্রশান্তি লাভ করে।

৪. দোয়া: আল্লাহর নিকট বিশেষ দোয়া গ্রহণ

রমজান মাসে দোয়া একটি বিশেষ আমল। রাসুল (সা.) বলেছেন, "তিন ব্যক্তির দোয়া কখনও ফিরিয়ে দেয়া হয় না: ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার (ইফতার পর্যন্ত), এবং মজলুমের দোয়া।" (মুসনাদে আহমাদ) রোজাদারের জন্য নিজ, পরিবারের এবং পুরো মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা মুস্তাহাব। এ মাসে দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায় এবং ব্যক্তিগত ও আখেরাতের মঙ্গল সাধন হয়।

৫. কোরআন তিলাওয়াত ও আল্লাহর জিকির

রমজান মাসে কোরআন তিলাওয়াত এবং জিকির করার মাধ্যমে একজন রোজাদার তার ইবাদতকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে পারেন। মসজিদে বসে কোরআন পাঠ ও আল্লাহর স্মরণ করা রোজার ফজিলত বাড়িয়ে দেয়, আত্মশুদ্ধির পথ খুলে দেয় এবং আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনে সহায়ক হয়।

৬. ইতিকাফ: শেষ দশকের বিশেষ আমল

রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করা সুন্নত। ইতিকাফ হলো মসজিদে বসে আল্লাহর ইবাদত করার একটি বিশেষ আমল, যেখানে একজন মুসলিম পুরোপুরি আল্লাহর প্রতি নিবেদিত হয়ে সময় কাটায়। এই সময়ের মধ্যে ইবাদত ও দোয়া বিশেষভাবে মর্যাদা পায় এবং জীবনের গুনাহ মাফ হয়।

৭. দান-সদকা: রমজানের বারকত

রমজান মাসে দান ও সদকা করা বিশেষভাবে মুস্তাহাব। রোজাদাররা বেশি বেশি দান-সদকা করে থাকে, যা তাদের আত্মা শুদ্ধ করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করে। দান-সদকার মাধ্যমে একজন রোজাদার অসহায়দের সাহায্য করে এবং তাদের নিজের সাওয়াব বাড়ায়।

রমজান মাসে এসব সুন্নত আমলগুলো পালন করা রোজাদারের জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভের সুযোগ সৃষ্টি করে। এই আমলগুলো শুধু রোজার ফজিলত বাড়ায় না, বরং মানুষের অন্তরকে আরও পরিশুদ্ধ করে, তার জীবনকে আল্লাহর ইচ্ছার সাথে সঙ্গতি রেখে পরিচালিত করে।

আব্দুর রহিম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে