ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের মুশফিকের স্মরণীয় সাত ইনিংস

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মার্চ ০৬ ১০:৪০:২৬
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের মুশফিকের স্মরণীয় সাত ইনিংস

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম নির্ভরযোগ্য সৈনিক মুশফিকুর রহিম, যার ব্যাটের প্রতিটি আঘাতে ঝরে পড়েছে সাহস ও শৈল্পিক ব্যাটিংয়ের ছটা। প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ারে কত শত স্মরণীয় ইনিংস উপহার দিয়েছেন তিনি! প্রতিকূলতা, চোট, প্রতিপক্ষের দাপট—সব কিছুই যেন তাকে আরও শাণিত করেছে।

ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন ৩৭ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। তবে তার রচিত ব্যাটিং মহাকাব্য কখনো বিস্মৃত হবে না। আজ ফিরে তাকানো যাক, সেই সোনালি মুহূর্তগুলোর দিকে, যেখানে মুশফিক তার ব্যাটে এঁকেছেন অবিস্মরণীয় সাতটি ইনিংস।

দুবাইয়ের মরুতে মহাকাব্য: ১৫০ বলে ১৪৪, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, ২০১৮

২০১৮ এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচ, যেন এক রূপকথার জন্মস্থল। প্রথম ওভারেই দুই উইকেট পতন, আঙুলের চোটে মাঠ ছাড়েন তামিম ইকবাল। বিপর্যস্ত বাংলাদেশকে বাঁচাতে সামনে এলেন মুশফিক। একদিকে শরীরে পাঁজরের চোট, অন্যদিকে লাসিথ মালিঙ্গার আগ্রাসন—কিন্তু তিনি দমে যাননি।

মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে ১৩১ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে টেনে তুললেন তিনি। শেষ দিকে মুস্তাফিজুর রহমান আউট হলে যখন মনে হচ্ছিল, আর কোনো রান যোগ হবে না, তখনই এক হাতে ব্যাটিং করতে নামেন তামিম! আর সেই সাহসী মুহূর্তের পুরো ফায়দা তুললেন মুশফিক। শেষ ১৫ বলে করলেন ৩২ রান, দলকে নিয়ে গেলেন ২৬১ রানে। এ যেন সাহস, লড়াই আর ব্যাটের জাদুতে মোড়ানো এক কবিতা।

এক রানের আক্ষেপ: ১১৬ বলে ৯৯, পাকিস্তানের বিপক্ষে, ২০১৮

এশিয়া কাপেরই আরেকটি ম্যাচ, সুপার ফোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে একরকম সেমিফাইনাল। তামিম আগেই ছিটকে গেছেন, সাকিবও নেই। ১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা দল। আবারও দৃশ্যপটে মুশফিক!

মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে ১৪৪ রানের অসাধারণ এক পার্টনারশিপ। শতক যখন একরকম নিশ্চিত, তখন শাহিন আফ্রিদির এক দুর্দান্ত ডেলিভারিতে থেমে গেলেন এক রান দূরেই! হতাশা থাকলেও তার লড়াকু ইনিংসই বাংলাদেশকে পৌঁছে দেয় ফাইনালের দোরগোড়ায়।

বিশ্বকাপে বীরত্বের গল্প: ৭৭ বলে ৮৯, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০১৫

অ্যাডিলেইড ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইতিহাস গড়ার ম্যাচ। ৯৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দল যখন ধুঁকছে, তখন মুশফিক ব্যাট হাতে সামনে এলেন। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে গড়ে তুললেন দুর্দান্ত এক জুটি। সিঙ্গেল-ডাবল, নিখুঁত টাইমিংয়ে বাউন্ডারি, ধীরস্থির অথচ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং—সব মিলিয়ে ৭৭ বলে ৮৯ রান! বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠার পেছনে এটি ছিল এক মহামূল্যবান ইনিংস।

ঝড়ো সেঞ্চুরি: ৭৭ বলে ১০৬, পাকিস্তানের বিপক্ষে, ২০১৫

শুরুটা ছিল ধীর, ২০ ওভারে ৬৭ রান। কিন্তু যখন মুশফিক নামলেন, সব বদলে গেল। আগ্রাসী শটে রান বাড়াতে লাগলেন, ৪২ বলে ফিফটি, এরপর আরও বিধ্বংসী ব্যাটিং। মাত্র ২৭ বলে পরবর্তী পঞ্চাশ রান পূর্ণ করলেন। তার ঝড়ো ১০৬ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ তুলল ৩২৯, জয় পেল ৭৯ রানের ব্যবধানে।

বিশ্বকাপে মঞ্চ কাঁপানো ইনিংস: ৮০ বলে ৭৮, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, ২০১৯

ওভালে ২০১৯ বিশ্বকাপের ম্যাচে সাকিব ও মুশফিকের দুর্দান্ত ব্যাটিং প্রদর্শনী। রাবাদা-এনগিদি-মরিসদের সামনে রীতিমতো শাসন করলেন তারা। ১৪১ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে ৩৩০ রানের চূড়ায় পৌঁছে দিলেন। মুশফিকের ৮০ বলে ৭৮ রানের ইনিংস ম্যাচ জয়ে রেখেছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

মিরপুরে অবিশ্বাস্য ক্যামিও: ২৫ বলে ৪৬, ভারতের বিপক্ষে, ২০১২*

শচীন টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরির ম্যাচ, কিন্তু দিন শেষে সবার মনে ছিল মুশফিকের ক্যামিও। ২৫ বলে ৪৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে নাস্তানাবুদ করে দিলেন ভারতের বোলারদের। ইরফান পাঠানের বিপক্ষে টানা দুটি ছক্কা, প্রভিন কুমারকে ফ্রি-হিটে বিশাল ছক্কা—সব মিলিয়ে এ যেন এক ব্যাটিং বিস্ফোরণ! বাংলাদেশ জয় পেল ৫ উইকেটে, মুশফিক হয়ে উঠলেন নায়ক।

ফতুল্লায় সাহসী শতক: ১১৩ বলে ১১৭, ভারতের বিপক্ষে, ২০১৪

বাংলাদেশ তখন দুঃসময় পার করছে। সেই সময় ফতুল্লায় ভারতের বিপক্ষে এক সাহসী ইনিংস খেললেন মুশফিক। এনামুল হকের সঙ্গে গড়লেন ১৩৩ রানের পার্টনারশিপ। শেষ দিকে একাই দলকে টেনে তুললেন, ১০৪ বলে শতক পূর্ণ করে শেষ ওভারে আউট হলেন। যদিও বাংলাদেশ ম্যাচটি হেরে গিয়েছিল, তবে তার ইনিংসটি হয়ে রইল আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।

মুশফিকুর রহিমের ব্যাট কথা বলেছে যখনই দল পড়েছে সংকটে। তিনি ছিলেন নির্ভরতার প্রতীক, সাহসী যোদ্ধা, নিবেদিতপ্রাণ ব্যাটসম্যান। ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে বিদায় নিলেও, তার রচিত ইনিংসগুলো রয়ে যাবে ইতিহাসের পাতায়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হয়ে থাকবে অনুপ্রেরণার বাতিঘর।

রাজিব/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে