ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫, ২১ ফাল্গুন ১৪৩১

রাসূল (সা.) এর রমজানের খাবারদাবার: পরিমিতিতে বরকত

২০২৫ মার্চ ০৫ ১৬:৫৩:৪৫
রাসূল (সা.) এর রমজানের খাবারদাবার: পরিমিতিতে বরকত

নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান মাস, যা মুসলিমদের জন্য আত্মসংযম এবং আত্মশুদ্ধির সময়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খাদ্যাভ্যাস আমাদের জন্য একটি মূল্যবান দিকনির্দেশনা। তাঁর সাহরি ও ইফতারের সময়ে খাদ্য গ্রহণ ছিল সাদাসিধে, স্বাস্থ্যকর, এবং পরিমিত—যা আমাদের শিখায় যে আসল মাধুর্য অল্পের মধ্যে নিহিত।

সাহরির সময় রাসূল (সা.) এর অভ্যেস

রাসূল (সা.) সাহরি খাওয়ার পদ্ধতিতে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। তিনি সাহরি খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে বলেন, "তোমরা সাহরি খাও, কারণ সাহরিতে বরকত আছে" (বুখারি, হাদিস: ১৯২৩, মুসলিম, হাদিস: ১০৯৫)। তাঁর সাহরি ছিল সহজ এবং শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট।

সাহরিতে তিনি যা খেতেন:

পানি ও খেজুর: কখনো তিনি পানি পান করতেন এবং কখনো একটি বা দুটি খেজুর খেতেন। খেজুর শরীরে দ্রুত শক্তি পৌঁছায়, আর পানির মাধ্যমে শরীরের হাইড্রেশন বজায় থাকে।

দুধ ও যবের রুটি: দুধ এবং যবের রুটি, যা দীর্ঘ সময় শক্তি জোগাতে সাহায্য করে, ছিল তাঁর পছন্দের খাবার।

ঠান্ডা পানি: সাহরি শেষে ঠাণ্ডা পানি পান করার মাধ্যমে তিনি সারা দিনের জন্য শরীরকে সজীব রাখতেন।

ইফতারের সময় রাসূল (সা.) এর অভ্যেস

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন দ্রুত ইফতারকারী। তিনি কখনোই সূর্যাস্তের পর দেরি করতেন না। তিনি বলেছেন, "মানুষ যতক্ষণ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে, ততক্ষণ তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে" (বুখারি, হাদিস: ১৯৫৭, মুসলিম, হাদিস: ১০৯৮)। তাঁর ইফতারের সাদাসিধে উপাদান ছিল:

তিনটি খেজুর ও পানি: সাধারণত তিনটি খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করতেন, আর যদি খেজুর না পাওয়া যেত, তবে শুধুমাত্র পানি পান করতেন। খেজুর দ্রুত শক্তি যোগায় এবং শরীরে গ্লুকোজের সরবরাহ বাড়ায়।

শরবত বা দুধ: কখনো কখনো তিনি মধু ও দুধের শরবত পান করতেন, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং শক্তি প্রদান করে।হালকা খাবার: ইফতার পরবর্তী সময়ে তিনি অতিরিক্ত ভারী খাবার থেকে বিরত থাকতেন। হালকা খাবারের মাধ্যমে তিনি হজম ভালো রাখতে এবং পরবর্তী ইবাদতকে সহজ করতে সাহায্য করতেন।

পরিমিত খাদ্য গ্রহণের উপকারিতা

রাসূল (সা.) এর খাদ্যাভ্যাস আমাদের শেখায় যে, পরিমিত খাদ্য গ্রহণে শরীর সুস্থ এবং মন শান্ত থাকে। তিনি বলেছেন, "কিছু খাবারই যথেষ্ট, যা পিঠ সোজা রাখে। তবে যদি খেতে চাও, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ খাবার, এক-তৃতীয়াংশ পানি, এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখো" (তিরমিজি, হাদিস: ২৩৮০)। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের ফলে অলসতা বাড়ে, ইবাদতে মনোযোগ কমে যায়, এবং শরীর ভারী হয়ে যায়।

রাসূল (সা.) কখনোই অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করতেন না। তাঁর খাদ্য তালিকায় ছিল খেজুর, দুধ, যব, মধু, জলপাই তেল, শাকসবজি, এবং ফলমূল—সবই সহজলভ্য এবং পুষ্টিকর।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদ্যাভ্যাস আমাদের জন্য এক আদর্শ। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন যে, রমজানে পরিমিত খাবার খেলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে, মনোযোগ বাড়বে, এবং আমাদের ইবাদত আরো গভীর হবে। তার এই সাদাসিধে জীবনযাত্রা অনুসরণ করে আমরা আমাদের রোজার মাসে স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারি, যা আমাদের আত্মিক উন্নতি এবং শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করবে।

আব্দুর রহিম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে