ঢাকা, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

কামাল মজুমদার: ‘আর রাজনীতি করব না, আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি নিয়েছি’

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মার্চ ০৩ ১৫:২৫:০৫
কামাল মজুমদার: ‘আর রাজনীতি করব না, আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি নিয়েছি’

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের রাজনীতির অঙ্গনে এক সময়ের দাপুটে নেতা, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার আজ আদালতে দাঁড়িয়ে এক আবেগঘন ঘোষণা দিলেন—তিনি আর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকবেন না। আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকেও তিনি অব্যাহতি নিয়েছেন।

সোমবার (৩ মার্চ) সকালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির হওয়ার পর তিনি কাঁদতে কাঁদতে এসব কথা বলেন।

আদালতে আবেগঘন মুহূর্ত

রাজধানীর কাফরুল থানায় দায়ের করা আতিকুল ইসলাম হত্যা মামলায় কামাল মজুমদারসহ ছয়জনকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলায় অন্য আসামিরা হলেন—সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ও এ কে এম শহিদুল হক। পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত তাঁদের প্রত্যেককে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর অনুমোদন দেন।

বিচারকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কামাল মজুমদার যেন দীর্ঘদিনের ক্ষোভ আর অভিমান উগরে দিলেন। বললেন, “মাননীয় আদালত, আমার বয়স ৭৬ বছর। আমি ডায়াবেটিসের রোগী। অথচ কারাগারে আমার ডায়াবেটিক মাপার মেশিন নিতে দিচ্ছে না। আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গেও কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।” এই কথা বলার পর তিনি কেঁদে ফেলেন।

এরপর কিছুটা সামলে নিয়ে বলেন, “আমি আর রাজনীতি করব না। আমি আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকেও অব্যাহতি নিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে। এই বয়সে আমাদের নাতি-নাতনিদের সঙ্গে খেলা করার কথা, অথচ আমরা আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছি!”

‘আজ থেকেই রাজনীতি ছাড়লাম’

শুনানি শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কামাল মজুমদার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, “আমি আওয়ামী লীগের সদস্যপদ ছেড়ে দিয়েছি। কোনো দলীয় পদেও নেই। আমি রাজনীতি থেকেও অব্যাহতি নিয়েছি।”

এক সাংবাদিক জানতে চান, “কবে থেকে রাজনীতি থেকে অব্যাহতি নিলেন?”

কামাল মজুমদার জবাবে বলেন, “আজ থেকেই। আমি আর রাজনীতি করব না।”

আরেকজন জানতে চান, “কেন রাজনীতি ছাড়লেন?”

তিনি বলেন, “এই দেশে রাজনীতি করার পরিবেশ নেই। ৭৬ বছর বয়সে রাজনীতি করা যায় না। আমরা চাই, নতুন প্রজন্ম নেতৃত্ব দিক।”

আদালতে আসামিদের অবস্থা

সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, কামাল মজুমদারসহ অন্যদের আদালতের হাজতখানা থেকে বের করা হয়। তাঁদের হাত পেছনে রাখা ছিল। সালমান এফ রহমান ছাড়া বাকি সবাই এক হাতে হাতকড়া পরা অবস্থায় ছিলেন। তবে সালমান এফ রহমানের দুই হাতে হাতকড়া পরানো ছিল এবং তাঁকে দুজন পুলিশ সদস্য আদালতকক্ষে নিয়ে যান। শুনানি শেষে একইভাবে তাঁকে ফের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আজিজুল হক দিদার বলেন, “সালমান এফ রহমানসহ অন্যদের কীভাবে আদালতে তোলা হয়েছে, সে বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।”

এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা, আজ কাঠগড়ায়

টানা ১৫ বছর ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য থাকা কামাল মজুমদার এক সময় মিরপুরের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। কথিত সামাজিক বিচার কমিটি গঠন করে নিজস্ব শৈলীতে সালিশি বিচার চালু করেছিলেন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আজ তিনি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন।

আদালতে তিনি বিচারকের কাছে অনুরোধ করেন, কারাগারে তাঁর জন্য ডায়াবেটিক মাপার মেশিন এবং ডিজিটাল কোরআন শরিফ সরবরাহের অনুমতি দেওয়া হোক।

নতুন নেতৃত্বের অপেক্ষা

কামাল মজুমদারের এই ঘোষণায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন প্রশ্ন উঠেছে—এটি কি শুধুই এক ব্যক্তির সিদ্ধান্ত, নাকি দলে আরও বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত? আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্বের আবির্ভাব কি সত্যিই ঘনিয়ে আসছে? সময়ই তার উত্তর দেবে।

রাজিব/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে