ঢাকা, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

রমজান: রোজার নিয়ত, সেহেরি ও ইফতারের দোয়া

২০২৫ মার্চ ০৩ ১১:১৬:০৬
রমজান: রোজার নিয়ত, সেহেরি ও ইফতারের দোয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান মাস মুসলমানদের জন্য শুধু একটি পবিত্র সময় নয়, এটি এক অভাবনীয় আত্মিক যাত্রা। আল্লাহ তাআলা হিজরতের দেড় বছর পর রোজাকে ফরজ করেছেন, যা সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা। সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩-এ আল্লাহ বলেন, "তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে—যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।"

রমজান মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে মুসলমানরা শুধু শারীরিকভাবে পিপাসা ও ক্ষুধা থেকে বিরত থাকে না, বরং তারা একটি নয়া আত্মিক উত্থান ও সৃষ্টির পথে পা রাখে। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।” (বুখারি, হাদিস : ১৯০১)

রোজার নিয়ত: অন্তরের এক শুদ্ধ প্রতিজ্ঞা

রোজা রাখা শুধুমাত্র সেহরি খাওয়া বা ইফতার করা নয়; এটি একটি আধ্যাত্মিক প্রতিজ্ঞা, যা মন থেকে সত্যিকারের নিয়ত করে শুরু হয়। প্রকৃত নিয়ত মুখে উচ্চারণের মাধ্যমে নয়, বরং অন্তরে দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে সৃষ্ট হয়। সেহরি খাওয়া, রোজার জন্য ঘুম থেকে ওঠা—এসবই নিয়তের অঙ্গ।

বাংলাদেশে এক আরবি নিয়ত খুবই জনপ্রিয়, যা অনেকেই মুখে উচ্চারণ করেন। তবে এটি ইসলামের মূল কিতাবে বিশেষভাবে বর্ণিত নয়। কিন্তু, যদি কেউ এটি পড়তে চায়, তাও সম্ভব। মূল কথা হলো, নিয়ত বাস্তবে হল মনস্থির করা—মুখে বলার চেয়ে মনযোগী ও সচেতন হওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আরবি নিয়ত

نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

ইফতারের দোয়া: আল্লাহর অনুগ্রহের পরশ

এমন এক মুহূর্ত আসে যখন সারাদিনের পিপাসা ও ক্ষুধা শেষে, ইফতার করার সময় আসে। এই সময়টি শুধু শারীরিক তৃপ্তি নয়, এটি এক আধ্যাত্মিক আনন্দও বটে। রাসুল (সা.) যখন ইফতার করতেন, তিনি বলতেন:

بِسْمِ اللَّهِ اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ

বাংলা উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।"

অর্থ: "হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিজিকের মাধ্যমে ইফতার করছি।"

ইফতারের পরের দোয়া: আল্লাহর রহমতের শর্ত

ইফতারের পর, রাসুল (সা.) একটি বিশেষ দোয়া করতেন, যা রোজাদারের হৃদয়ে এক নতুন শক্তি জাগায়। তিনি বলতেন:

ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ

বাংলা উচ্চারণ: "জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতাল্লাতিল উ’রুকু; ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ।"

অর্থ: "পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো।"

ইফতারের ফজিলত: এক স্বর্গীয় আনন্দের অনুভূতি

রমজান মাসের ইফতার মুহূর্তের আনন্দ দুটি ধাপে বিভক্ত। একদিকে যখন রোজাদার ইফতার করে, অন্যদিকে যখন সে প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, "রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ। একটি আনন্দ হচ্ছে যখন সে ইফতার করে। আরেকটি হচ্ছে যখন সে প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।" (তিরমিজি, হাদিস : ৭৬৬)

রমজানের রোজা শুধু একটি ধর্মীয় কর্মই নয়, এটি এক আধ্যাত্মিক যাত্রা, যা আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, আল্লাহর কাছে পৌঁছানোর এক সেতু তৈরি করে। রোজা শুধুমাত্র খালি পেটে থাকার নয়, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জনের পথ। আল্লাহ তাআলা আমাদের এই পবিত্র মাসে সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং আমাদের সব দোয়া কবুল করুন। আমিন।

আব্দুর রহিম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে