ঢাকা, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫, ১৮ ফাল্গুন ১৪৩১

রমজানে আল্লাহভীতি অর্জনের উপায়: তাকওয়া লাভের পথ

২০২৫ মার্চ ০২ ১৯:২২:৫৯
রমজানে আল্লাহভীতি অর্জনের উপায়: তাকওয়া লাভের পথ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান মাস মুসলিম জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ সময়, যা শুধুমাত্র উপবাসের জন্য নয়, বরং আল্লাহভীতি অর্জনের একটি অসাধারণ সুযোগ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, "হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।" (সুরা: বাকারাহ, আয়াত: ১৮৩)

এ থেকেই প্রতিত হয় যে, রোজা শুধু শারীরিক উপবাসের মাধ্যম নয়, বরং এই মাসের মাধ্যমে একজন মুসলিম তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে এবং আল্লাহর কাছে পৌঁছানোর এক বিশেষ উপায় খুঁজে পায়। রমজানে যদি কেউ আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারে, তবে তা তার সিয়ামের সফলতা প্রমাণিত হবে।

আল্লাহভীরু মানুষের গুণাবলী

এলাহ্‌ ইবনে আবি তালিব (রা.) আল্লাহভীরু মানুষদের পরিচয় দিয়েছেন, যারা সত্যিকার অর্থে মর্যাদাশীল। তিনি বলেন, ‘তারা হলেন সেই মানুষরা, যারা জীবনে সোজা পথে চলে, পৃথিবী ও আকাশের মাঝে তাদের কাজ এক হতে থাকে, তারা কথা বলে সঠিকভাবে, চুপ থাকে বিরক্তির মধ্যে, এবং সর্বদা নিজেদের কর্মের প্রতি সচেতন থাকে।’

তাদের মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়:

তারা ঈমান ও জ্ঞান দ্বারা শক্তিশালী।

তারা সবসময় সুবিচার করে, নিজের চাহিদা ও স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে।

তারা সৎ পথে চলতে এবং অতিরিক্ত সম্পদ কিংবা বৈভবের প্রতি অনীহা প্রকাশ করে।

একাধিক বিপদে তারা ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখে, এবং দারিদ্র্যেও অনুতপ্ত না হয়ে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে।

তাকওয়া অর্জনের পন্থা

কোরআন ও হাদিসে আল্লাহভীরু হওয়ার কিছু স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, যা অনুসরণ করলে একজন মুসলিম তার জীবনে তাকওয়া লাভ করতে পারে।

১. সতর্কতা অবলম্বন করা:

আল্লাহভীরু হতে হলে, এমনকি সংশয়পূর্ণ বিষয়গুলিও পরিহার করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি ক্ষতিকর কাজের ভয়ে বৈধ কিন্তু সন্দেহজনক কাজ ছাড়ে না, সে কখনো আল্লাহভীরু হতে পারবে না।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫১)

২. ক্ষমা করা:

ক্ষমা ও উদারতা সত্যিই তাকওয়া অর্জনের এক গুরুত্বপূর্ণ উপায়। আল্লাহ বলেন, “এবং ক্ষমা করে দেওয়া তাকওয়ার নিকটতর।” (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৩৭)

৩. সুবিচার করা:

সুবিচার মানবিকতা ও তাকওয়ার নিকটবর্তী। কোরআনে নির্দেশ রয়েছে, "তোমরা সুবিচার করো, এটি তাকওয়ার বেশি কাছে পৌঁছানোর উপায়।" (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৮)

৪. সত্যের অনুসরণ:

সত্যের পথে চলা এবং সত্যকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করা আল্লাহভীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আল্লাহ বলেন, "যারা সত্য এনেছে এবং সত্য বলে স্বীকার করেছে, তারা আল্লাহভীরু।" (সুরা : জুমার, আয়াত : ৩৩)

৫. দোয়া করা:

তাকওয়া আল্লাহর বিশেষ রহমত। তাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেন তিনি আমাদের জন্য তাকওয়া লাভের তাওফিক দান করেন। কোরআনে বলা হয়েছে, “হে আমাদের প্রভু, আমাদের জন্য এমন পুত্র ও পুত্রবধূ দান করো, যারা আমাদের জন্য স্বস্তির কারণ হবে।” (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৭৪)

৬. আল্লাহভীরু মানুষের সঙ্গ গ্রহণ:

আল্লাহভীরু মানুষের সঙ্গ আপনার তাকওয়া বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হতে পারে। কোরআনে নির্দেশ রয়েছে, “হে মুমিনরা, আল্লাহকে ভয় করো এবং সৎ মানুষের সঙ্গে থাকো।” (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯)

তাকওয়ার পুরস্কার

তাকওয়া মানুষের জন্য শুধুমাত্র দুনিয়াতে নয়, বরং আখিরাতেও সফলতা আনতে পারে। আল্লাহ বলেন, "যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার পথ সুগম করবেন এবং তাকে অসীম দানে পুরস্কৃত করবেন।" (সুরা : তালাক, আয়াত : ২-৩)

এ মাসে আমরা সকলেই আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন তিনি আমাদের সকলকে তাকওয়া অর্জনের তাওফিক দান করেন এবং আমাদের আমল যেন তাঁর সন্তুষ্টি লাভের কারণ হয়। আমিন।

আব্দুর রহিম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে