ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩১

বাংলাদেশের একটি শক্তির কারণে যুদ্ধে জড়াবে না ভারত

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ ফেব্রুয়ারি ২৭ ২২:৪০:৩৭
বাংলাদেশের একটি শক্তির কারণে যুদ্ধে জড়াবে না ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দিল্লির সাউথ ব্লকের কনফারেন্স রুমে একটি উত্তপ্ত আলোচনা চলছে, যেখানে সামরিক বিশ্লেষকরা একত্রিত হয়েছেন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন। আলোচনার মধ্যে একজন গম্ভীর স্বরে বলেন, "আমরা তো বৃহৎ শক্তি, বাংলাদেশ আমাদের সামনে দাঁড়াতে পারবে না।" তবে, এক অভিজ্ঞ জেনারেল চুপচাপ বসেছিলেন। তিনি ধীরে ধীরে সামান্য ঝুঁকলেন এবং ঠান্ডা গলায় বললেন, "এটা যদি তোমরা সত্যি ভাবো, তাহলে ভয়ঙ্কর ভুল করবে। কারণ যুদ্ধ হলে বাংলাদেশ ভুগবে ঠিকই, কিন্তু ভারত টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।"

এ কথায় রুমের ভেতরে মুহূর্তেই নীরবতা নেমে আসে। বাংলাদেশের ভূখণ্ড এমনভাবে তৈরি যে, এখানে যুদ্ধ করা শুধু কঠিন নয়, প্রায় অসম্ভব। চারপাশে নদী, খাল, বিল এবং নিচু জমির কারণে ভারী সামরিক যান চলাচল করতে পারে না। তাছাড়া, যদি ট্যাংক বা বড় অস্ত্র বাংলাদেশে প্রবেশ করানো যায়, সেগুলো সহজেই কাঁদার ফাঁদে আটকে পড়বে। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, বহিরাগত শক্তিগুলো এখানে বারবার সমস্যায় পড়েছে। মুঘল আমলে বাংলার নবাবরা প্রায় স্বাধীনভাবে শাসন করতেন এবং ব্রিটিশরা ভারত শাসন করার পরেও বাংলার গ্রাম অঞ্চলে প্রবেশ করা তাদের জন্য কঠিন ছিল। 1971 সালের যুদ্ধেও বাংলাদেশের গেরিলা যুদ্ধ পদ্ধতির ফলে পাকিস্তানের সুসজ্জিত সেনাবাহিনী পরাস্ত হয়েছিল।

বিশ্ব অর্থনীতির সমীক্ষাগুলো বলছে, 2050 সালের মধ্যে ভারত চীনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হতে পারে, তবে যুদ্ধের খরচ ভারতের অর্থনীতির ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করবে। বিদেশী বিনিয়োগ কমবে, বাজারে মন্দা নেমে আসবে, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ বাড়লে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। সুপারপাওয়ার হতে গেলে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, কূটনৈতিক দক্ষতা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন, কিন্তু যুদ্ধ সবকিছু ধ্বংসের পথে ঠেলে দেবে।

চীন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ মিত্র, সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। ভারত যদি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালায়, তাহলে চীন সীমান্তে সামরিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা ভারতকে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে বাধ্য করবে – একদিকে বাংলাদেশ, অন্যদিকে চীন। ইতিহাস অনুযায়ী, দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ চালানো কোনো দেশের পক্ষেই সহজ নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারও এই ভুল করেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়েছিলেন।

বাংলাদেশের প্রতি চীনের সমর্থন ভারতের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনবে, কারণ ভারতটির উত্তর-পূর্বাঞ্চল, সেভেন নামে পরিচিত সাতটি রাজ্য, সামরিক দিক থেকে সবচেয়ে দুর্বল অঞ্চল। এই রাজ্যগুলো ভারতীয় মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত মাত্র 40 কিলোমিটার চওড়া একটি পথ দিয়ে, যাকে চিকেন নেক বলা হয়। যুদ্ধ বাঁধলে চীন সহজেই এই অঞ্চল দখল করে ভারতকে দুই টুকরো করে দিতে পারে। চীন দীর্ঘদিন ধরে অরুণাচল প্রদেশের একটি বড় অংশ নিজের দাবি করে আসছে, এবং যুদ্ধ হলে তারা সেই অঞ্চল দখল করতে চাইবে।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সবসময় সুবিধাবাদী। ভারতের শক্তি বাড়ানোর সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্র এটিকে ভবিষ্যতের প্রতিদ্বন্দী হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। যদি ভারত বাংলাদেশে আগ্রাসন চালায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উত্থান থামানোর সুযোগ হিসেবে এটি গ্রহণ করতে পারে। সিএআই (CIA) ভারতের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে উসকে দিতে পারে, এবং কাশ্মীরে পাকিস্তানের হস্তক্ষেপের পথ উন্মুক্ত হয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং পশ্চিমাদের চাপের কারণে ভারতের অর্থনীতিতে বিশাল ধাক্কা লাগবে।

যুদ্ধ কখনোই শুধু অস্ত্রের শক্তিতে জেতা যায় না। আমেরিকা ভিয়েতনাম দখল করতে পারেনি, রাশিয়া আফগানিস্তানে টিকতে পারেনি, কারণ যুদ্ধের আসল শক্তি হলো ভূমির মালিকানা ও প্রতিরোধের মনোবল। 1971 সালে বাংলাদেশের জনগণ যেমন প্রতিরোধ গড়েছিল, তেমনি তারা আবারও ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, পাকিস্তানসহ অন্যান্য শক্তি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে এবং আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভারতের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করবে।

অতএব, দিল্লির সেই কনফারেন্স রুমের আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসে এক কঠিন বাস্তবতা – বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধ মানে ভারতকে আরও একবার তার অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে। বিশ্ব রাজনীতির দৃষ্টিতে ভারত যতই শক্তিশালী হয়ে উঠুক, বাস্তবতা অনেক ভিন্ন হতে পারে। যুদ্ধের ক্ষেত্রেও, ভারত একাধিক সংকটে পড়তে পারে, এবং শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

শর্মা/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে