ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১

তারাবির নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও দোয়া: একটি পূর্ণাঙ্গ গাইড

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ২৫ ১৯:৫৪:২২
তারাবির নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও দোয়া: একটি পূর্ণাঙ্গ গাইড

নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান মাসে সিয়াম বা রোজার পরিপূরক একটি বিশেষ ইবাদত হলো তারাবির নামাজ, যা আল্লাহর সাথে নৈকট্য বাড়ানোর অন্যতম পথ। পবিত্র এই মাসে সারাদিন রোজা রাখার পর রাতে তারাবি নামাজ আদায় করা একটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ, যা আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ।

তারাবি নামাজের অর্থ ও তাৎপর্য

'তারাবি' শব্দটি আরবী ভাষার একটি পরিভাষা, যার অর্থ বিশ্রাম নেওয়া বা শান্তিতে বসে থাকা। নামাজের মধ্যে বিরতি নিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এটি তারাবি নামাজ নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করে এবং নিজেকে তৃপ্তি ও শান্তিতে পূর্ণ করে।

এটি ২০ রাকাত নামাজ হিসেবে আদায় করা হয়, যা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ বা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। নিয়মিত তারাবি নামাজ না পড়লে এটি বড় গুনাহের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। কুরআন নাজিলের মাসে কুরআন খতম করার মাধ্যমে অনন্ত সওয়াব অর্জিত হয়, এবং জামাতে এই নামাজ আদায় করলে তা আরও বেশি ফজিলতপূর্ণ হয়ে ওঠে।

তারাবির দুটি প্রধান ধরণ

দেশে দুই ধরনের তারাবি প্রচলিত রয়েছে:

সুরা তারাবি: পবিত্র কুরআনের যেকোনো সুরা দিয়ে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা।খতম তারাবি: পুরো কুরআন পড়া এবং ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা। খতম তারাবিতে সওয়াব বেশি হলেও সুরা তারাবি দিয়েও নামাজ আদায় করা বৈধ।

তারাবির নামাজের আদায়ের নিয়ম

এশার নামাজের ফরজ ৪ রাকাত পড়ার পর, দুই রাকাত সুন্নত নামাজ এবং বিতর নামাজের আগে ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করতে হবে। এ নামাজটি ১০ সালামে ২০ রাকাতভাবে পূর্ণ হয়।

তারাবির নামাজের নিয়ত

তারাবির নামাজের নিয়ত করতে হবে, যা আরবি ও বাংলা উভয় ভাষায় হতে পারে।

আরবি নিয়ত:نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ للهِ تَعَالَى رَكْعَتَى صَلَوةِ التَّرَاوِيْحِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْবাংলা নিয়ত: আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তারাবির সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবার। (যদি জামাতে হয়, তাহলে ‘এ ইমামের পেছনে পড়ছি’ যোগ করবেন)।

তারাবির নামাজের আদায় পদ্ধতি

তারাবির নামাজটি দুই রাকাত করে পড়া হয়। প্রথমে ২ রাকাত পড়া শেষে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা হয়। তারপর আবার দুই রাকাত পড়া হয়। ৪ রাকাত শেষে একটু বিশ্রাম নেওয়া হয়। বিশ্রামকালে তাসবিহ, তাহলিল, দোয়া, দরূদ ইত্যাদি করা যেতে পারে। পরে পুনরায় দুই দুই রাকাত করে নামাজ আদায় করা হয়।

তারাবির নামাজের দোয়া

বিশ্রামের সময় (প্রতি ৪ রাকাত পর) একটি বিশেষ দোয়া পড়া প্রচলিত রয়েছে:

سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحَانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ

উচ্চারণ:‘সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।’

এটি একটি ঐতিহ্যগত দোয়া, তবে এটি না পড়লেও তারাবি নামাজ হয়ে যাবে। কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত অন্য যেকোনো দোয়া, ইস্তেগফার, তওবা এখানে পড়া যেতে পারে।

তারাবির নামাজের প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক

মনে রাখতে হবে, যদি কোনো কারণে একদিন তারাবি নামাজ না পড়া সম্ভব না হয়, তবে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। সমাজে কিছু মানুষ মনে করেন যে, তারাবি নামাজ না পড়লে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে, কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। কুরআন ও হাদিসে এমন কোনো নির্দেশনা নেই।

এভাবে, তারাবি নামাজ আদায় করলে রমজান মাসে সাওয়াবের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং একজন মুসলিম আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ করে।

আব্দুর রহিম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে