ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১

সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি: "আমি সতর্ক করে দিচ্ছি!"

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ ফেব্রুয়ারি ২৫ ১৫:৪৫:১৮
সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি:

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কঠোর বার্তা দিলেন সেনাপ্রধান। জাতিকে সতর্ক করে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন—অভ্যন্তরীণ বিভক্তি, দ্বন্দ্ব আর বিশৃঙ্খলা চলতে থাকলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব চরম হুমকির মুখে পড়বে।

"আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি, পরে যেন কেউ না বলে আমি আগেই বলিনি। যদি নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ভুলে একসঙ্গে কাজ না করেন, যদি কলহ-বিবাদ, হানাহানি আর সংঘর্ষ চলতেই থাকে—তাহলে এই দেশ ও জাতি কঠিন সংকটে পড়বে!"

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অপরাধ বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, "আমরা নিজেরাই পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদগারে ব্যস্ত। ফলে অপরাধীরা এই বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিচ্ছে। তারা জানে, এই পরিস্থিতিতে অপরাধ করে পার পাওয়া সহজ। একমাত্র ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধই পারে এই অবস্থার অবসান ঘটাতে।"

তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, "পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই—এসব সংস্থা দেশের জন্য অসংখ্য ভালো কাজ করেছে। আজ আমরা যে স্থিতিশীলতা উপভোগ করছি, তা অনেক ত্যাগের ফসল। কিন্তু এখন যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য মামলার মুখে, জেলবন্দি, কিংবা তদন্তের আওতায়, তখন বাহিনীগুলোর মনোবল দুর্বল হচ্ছে।"

সেনাপ্রধান মনে করিয়ে দেন, দেশের নিরাপত্তা শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভরশীল নয়। "শুধু সেনাবাহিনী দিয়ে দেশের শান্তি বজায় রাখা সম্ভব নয়। আমাদের সঙ্গে আছে দুই লাখ পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব, আনসার। সেনাবাহিনীর মাত্র ৩০,০০০ সদস্য দিয়ে বিশৃঙ্খলার শূন্যস্থান পূরণ করা সম্ভব নয়। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু আমাদের নিজেদের তৈরি করা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি যদি না থামে, তাহলে শান্তি ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে যাবে।"

তিনি আরও যোগ করেন, "যে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে, তার যথাযথ তদন্ত ও বিচার হবে। তবে সেটা যেন এমনভাবে করা না হয়, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। যদি বাহিনীগুলো দুর্বল হয়ে যায়, তাহলে দেশও দুর্বল হয়ে পড়বে।"

দেশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, "ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে, বা তার কাছাকাছি সময়ে। আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি, ১৮ মাসের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন। সরকারও সে পথেই এগোচ্ছে।"

তিনি আরও জানান, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, এবং তার প্রচেষ্টাকে সফল করতে সবাইকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

সেনাপ্রধান আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, "আমি লক্ষ্য করেছি, কিছু মহল সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করছে। কেন? আমি আজও এর উত্তর খুঁজে পাইনি। সেনাবাহিনী সবসময় দেশের জন্য কাজ করেছে, এখনও করছে। শুধু সেনাবাহিনী নয়, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীও কঠোর পরিশ্রম করছে। আমাদের আক্রমণ না করে আমাদের অনুপ্রাণিত করুন, উপদেশ দিন। আমরা গঠনমূলক পরামর্শ গ্রহণ করতেই প্রস্তুত।"

সেনাপ্রধান দেশের নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, "মতের ভিন্নতা থাকতে পারে, রাজনৈতিক বিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু জাতির স্বার্থের প্রশ্নে আমাদের এক থাকতে হবে। তাহলেই দেশ উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে। অন্যথায় সামনে আরও বড় সংকট আসবে।"

তিনি পুনরায় সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, "আমি আজ বলে দিলাম, পরে যেন কেউ না বলে যে আমি সতর্ক করিনি!"

সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে এক স্পষ্ট বার্তা বহন করে। জাতিকে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন—অভ্যন্তরীণ কলহ, বিশৃঙ্খলা ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। একমাত্র জাতীয় ঐক্য, সুসংগঠিত প্রশাসন এবং শক্তিশালী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই পারে দেশকে স্থিতিশীলতার পথে ফিরিয়ে আনতে।

এখন প্রশ্ন একটাই—জাতি কি সেনাপ্রধানের সতর্কবার্তা শুনবে, নাকি আরও বড় সংকটের দিকে এগিয়ে যাবে?

তানভির/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে