ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১

ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ ফেব্রুয়ারি ২৫ ১২:২৮:৪৪
ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা করেছেন যে, নির্বাচন ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে পারে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সেই লক্ষ্যে তাদের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে এবং তারা জানিয়েছে যে, চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে ভোটার তালিকার কাজ সম্পন্ন করা হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের প্রস্তুতি শুরু করেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে ৩০০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটও তাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে এবং অনেকে ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় কাজ শুরু করেছেন। এছাড়া অন্যান্য ইসলামী দলগুলোও সক্রিয়ভাবে নির্বাচনী পরিকল্পনা সাজাচ্ছে।

সাধারণভাবে ধরে নেওয়া হচ্ছে যে ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে যদি কোনো কারণে তা সম্ভব না হয়, তাহলে আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যেই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হতে পারে বলে সরকার সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।

অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন যে, অক্টোবর মাসে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। তার মতে, অক্টোবরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা, ডিসেম্বরে নির্বাচন এবং জানুয়ারির মধ্যে নতুন সরকার গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে।

নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বিএনপি ও বাম গণতান্ত্রিক জোট চলতি বছরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন চায় এবং স্থানীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন করানোর পক্ষে মত দিয়েছে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার পক্ষেই মত দিয়েছে এবং নির্বাচনের আগে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।

এবারের নির্বাচনে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোরও অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের পক্ষ থেকে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা দ্রুতই নিবন্ধন পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে, কিছু রাজনৈতিক মহল আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে আপত্তি তুলেছে এবং দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের মিত্র দলগুলোর অংশগ্রহণ নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিশ্চিত করেছে যে, তারা ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্টের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেওয়া হবে এবং অক্টোবরে তফসিল ঘোষণা করা হবে। সাধারণত, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ৪০ থেকে ৪৫ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়, তাই ডিসেম্বরে ভোট গ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে অক্টোবরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করা হবে।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন এবং পর্যবেক্ষকদের মতে, ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে বড় কোনো বাধা নেই। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আবদুল আলীম জানিয়েছেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে কিছু অল্প সময়ের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি করে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। ভোটার তালিকা হালনাগাদের পাশাপাশি সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজও চলছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য থাকলে ডিসেম্বরেই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলি বলেছেন, নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বড় কোনো বাধা দেখছেন না। কমিশন তিন ধরনের সংস্কারের সুপারিশ করেছে—তাৎক্ষণিক, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি। কিছু সংস্কার কাজ অল্প সময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে, তাই নির্বাচন আয়োজনে কোনো জটিলতা হওয়ার কথা নয়।

সংস্কারের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ছয়টি কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে এবং তা প্রকাশিত হয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারি, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এ কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে এবং আরও আলোচনা করার পরিকল্পনা রয়েছে। স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম ও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনও শিগগির জমা দেওয়া হবে।

সার্বিকভাবে, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতি, নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম এবং সংশ্লিষ্ট মহলের পর্যবেক্ষণ বিবেচনায় নিয়ে বলা যায় যে, ডিসেম্বরেই নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে চূড়ান্ত দিনক্ষণ।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে