ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের তালিকা প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদের অভিযোগ এনে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও এমপিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে চলমান গণঅবস্থানের দশম দিনে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফজলুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে এই তালিকা ঘোষণা করেন।

ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রূপরেখা

ফজলুর রহমান বলেন, "আমরা ফ্যাসিবাদ বিলোপের লক্ষ্যে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেছি। এরই অংশ হিসেবে ফ্যাসিবাদী মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও এমপিদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।" তিনি আরও বলেন, "২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত আওয়ামী শাসনামলে দায়িত্ব পালনকারী সকল মন্ত্রী ও উপদেষ্টাকে ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করছি। আমরা তাদের গ্রেপ্তার করে ৭ থেকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের দাবি জানাচ্ছি।"

আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের মতে, তালিকাভুক্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। ফজলুর রহমান বলেন, "আমরা দাবি করছি, তাদেরকে গ্রেপ্তার করে দীর্ঘমেয়াদি শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অধিকার চিরতরে বাতিল করতে হবে।"

তালিকা ঘোষণার সময় উপস্থিত ব্যক্তিত্বরা

এই তালিকা ঘোষণার সময় গণঅবস্থানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নেতৃবৃন্দ। তাদের মধ্যে ছিলেন:

সাংগঠনিক প্রধান: মো. শফিউর রহমান

সদস্য সচিব: হাসান মোহাম্মদ আরিফ

যুগ্ম-আহ্বায়ক: ডা. মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম

সহকারী সদস্য সচিব: গালীব ইহসান, আব্দুস সালাম, মাহমুদুল হাসান ফয়সাল

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক: আবদুল ওয়াহেদ

সদস্য সচিব: ফজলুর রহমান

সহকারী সদস্য সচিব: আশরাফুল ইসলাম

বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক: মো. আরিফুল ইসলাম

গণঅবস্থান ও আন্দোলনের পটভূমি

১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দুই নেতা মো. ওমর ফারুক ও আবু সাঈদ অনশনের মাধ্যমে রাজু ভাস্কর্যে চলমান গণঅবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা এতে যোগ দেন, যা আন্দোলনকে আরও বেগবান করে।

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের পাঁচ দফা দাবি

১৯ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ পাঁচ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো:

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্র ১৪ দল, মহাজোট এবং সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠন নিষিদ্ধ করা।

এই দলগুলোর সকল সম্পদ ও কার্যালয় রাষ্ট্রীয়ভাবে অধিগ্রহণ করে নির্যাতিত জনগণের পুনর্বাসন করা।

২০০৯-২০২৫ পর্যন্ত আওয়ামী সরকারের সকল সদস্যকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা।

ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান রোধে নতুন কোনো দল বা সংগঠনের গঠন নিষিদ্ধ করা।

সংবিধানে ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নিষিদ্ধ করার বিধান সংযোজন করা।

রাজনৈতিক উত্তেজনার নতুন দিগন্ত

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের এই তালিকা প্রকাশ ও দাবিগুলো দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে জড়িত বিভিন্ন সংগঠন এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও, সরকারপক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আন্দোলন এবং দাবিগুলো রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে।

মারুফ/

গুগল নিউজে ফলো করুন