ঢাকা, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১

যা যা করলে কমে যাবে স্মৃতিশক্তি

লাইফস্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ ফেব্রুয়ারি ২১ ১০:৫৯:১৩
যা যা করলে কমে যাবে স্মৃতিশক্তি

বর্তমান যুগে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া যেন এক সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি একসময় বয়সজনিত প্রবণতা হিসেবে ধরা হলেও, এখন কমবেশি সব বয়সের মানুষই এই সমস্যার শিকার। মানসিক চাপ, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, পরিবেশগত দূষণ ও অতিরিক্ত প্রযুক্তি নির্ভরতা—এসব কারণে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে পারে। তবে আমাদের প্রতিদিনের কিছু ভুল অভ্যাস স্মৃতিশক্তিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। নিচে এমন কিছু অভ্যাসের কথা উল্লেখ করা হলো, যেগুলো স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিতে পারে।

১. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

স্মৃতিশক্তি রক্ষার অন্যতম প্রধান উপায় হলো সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা। পুষ্টিকর খাবার আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকর খাবার তা কমিয়ে দেয়। উচ্চমাত্রার চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার যেমন—জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার মস্তিষ্কের নিউরনের কার্যক্রম ব্যাহত করে। অন্যদিকে ভিটামিন, খনিজ ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার, যেমন—ডিম, বাদাম, মাছ, সবুজ শাকসবজি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

২. শারীরিক ব্যায়ামের অভাব

শারীরিক কার্যকলাপ কেবল শরীরের জন্যই নয়, মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী। নিয়মিত ব্যায়াম মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়, যা স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। যারা দীর্ঘ সময় বসে থাকেন ও শরীরচর্চা করেন না, তাদের মস্তিষ্ক তুলনামূলক কম সক্রিয় থাকে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

৩. পর্যাপ্ত পানি না পান করা

শরীরে পানির অভাব হলে মস্তিষ্কের কোষগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, ফলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, হালকা জলশূন্যতাও মানসিক দক্ষতা কমিয়ে দিতে পারে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা জরুরি।

৪. পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব

ঘুমের অভাব স্মৃতিশক্তির সবচেয়ে বড় শত্রু। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কের কোষগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম স্মৃতিশক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। ঘুমের মধ্যে মস্তিষ্ক তথ্য সংরক্ষণ ও প্রসেসিং করে, তাই এটি বাধাগ্রস্ত হলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে পারে।

৫. অতিরিক্ত প্রযুক্তি নির্ভরতা

স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও টেলিভিশনের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের মস্তিষ্ককে অলস করে তুলছে। আজকাল মানুষ অনেক সহজেই স্মার্টফোনে তথ্য সংরক্ষণ করে রাখে, ফলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক স্মৃতিশক্তির ব্যবহার কমে যায়। দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে পারে।

৬. অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও উদ্বেগ

মানসিক চাপ ও উদ্বেগের ফলে কর্টিসল নামক হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা মস্তিষ্কের কোষের জন্য ক্ষতিকর। দীর্ঘ সময় মানসিক চাপ থাকলে এটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে তোলে। তাই চাপমুক্ত থাকতে ধ্যান, যোগব্যায়াম ও পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভ্যাস করা উচিত।

৭. ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ

ধূমপান ও অ্যালকোহল মস্তিষ্কের কোষকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। এগুলো মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দেয়, যা স্মৃতিশক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দীর্ঘদিন ধূমপান বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ করলে স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়ে।

কীভাবে স্মৃতিশক্তি ধরে রাখা যায়?

উপরোক্ত ক্ষতিকর অভ্যাসগুলো পরিহার করার পাশাপাশি কিছু ভালো অভ্যাস গড়ে তুললে স্মৃতিশক্তি ধরে রাখা সম্ভব।

স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ করা

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা

নিয়মিত ব্যায়াম করা

পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা

প্রযুক্তির ব্যবহার কমানো ও বই পড়ার অভ্যাস করা

মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান ও যোগব্যায়াম করা

ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা

স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে সচেতনতা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার বিকল্প নেই। আমাদের প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসই নির্ধারণ করে ভবিষ্যতে আমাদের মস্তিষ্ক কতটা সক্রিয় ও কার্যকর থাকবে। তাই সুস্থ মস্তিষ্ক ও তীক্ষ্ণ স্মৃতিশক্তির জন্য সঠিক অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং ক্ষতিকর অভ্যাস এড়িয়ে চলুন।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে