ঢাকা, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১

ভারতীয় ভিসা নিয়ে আলোচনা

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ ফেব্রুয়ারি ২১ ০৯:২৪:৩৬
ভারতীয় ভিসা নিয়ে আলোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ওমানের রাজধানী মাস্কটে ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। আলোচনায় উঠে এসেছে ভারতীয় ভিসা সংকট, শেখ হাসিনার প্রত্যার্পণ এবং সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে প্রচারিত তথ্যের সত্যতা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভারতের ভিসা নীতির হঠাৎ পরিবর্তন।

বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা প্রদানের হার কমিয়ে দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, “এটি আমাদের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা। চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতে চাওয়া অনেক রোগী এখন বিপাকে পড়েছেন। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে এ নিয়ে আমরা কথা বলেছি এবং ভিসা সংখ্যা পুনরায় স্বাভাবিক করার অনুরোধ জানিয়েছি। নিরাপত্তার অজুহাতে হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা অনেককেই ভোগান্তিতে ফেলেছে।”

তৌহিদ হোসেন আরও উল্লেখ করেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ভিসার জন্য বাংলাদেশিরা সাধারণত দিল্লিতে যান, কিন্তু যদি দিল্লিতে যাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে তাদের জন্য নতুন সমাধান দরকার। তিনি জানান, কিছু বাংলাদেশি নাগরিক বিকল্প হিসেবে ভিয়েতনাম হয়ে ইউরোপীয় ভিসা নিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ ইসলামাবাদ থেকে ভিসা সংগ্রহের কথা ভাবছেন, যদিও বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট নেই।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত খবরকে ‘ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিহিত করেন এবং ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশে এসে বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণের আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, “সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে কোনো বড় ধরনের সংঘাত নেই। গত আগস্টে যখন সরকার গঠন হয়নি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় ছিল না, তখন কিছু সহিংসতা ঘটেছিল, কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।”

বৈঠকে আলোচিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল শেখ হাসিনার প্রত্যার্পণ। তৌহিদ হোসেন জানান, “বাংলাদেশের আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া অনুসারে, তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন। তবে তিনি ভারতে বসে বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, যা তরুণদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে এবং সাম্প্রতিক সহিংসতার কারণ হয়েছে।”

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক টানাপোড়েন বাণিজ্য সম্পর্কেও প্রভাব ফেলেছে। আগস্টের পর থেকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তৌহিদ হোসেন। তবে, বার্ষিক বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে এবং বাংলাদেশ ভবিষ্যতে বাণিজ্যের পরিমাণ আরও বাড়ানোর প্রত্যাশা করছে।

তিনি জানান, জয়শঙ্করকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং সফরের তারিখ নির্ধারণের দায়িত্ব ভারত সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ভারতের ভিসা সংকট, সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে প্রচার, শেখ হাসিনার প্রত্যার্পণ ও বাণিজ্য সম্পর্কের টানাপোড়েন—সবকিছুই এই বৈঠকে গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষত, বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা ইস্যু সমাধানের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, ভারত কীভাবে এই কূটনৈতিক আলোচনার প্রতিক্রিয়া জানায় এবং দুই দেশের সম্পর্ক কোন পথে এগিয়ে যায়।

জামাল/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে