ঢাকা, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১

রমজান মাস:

রমজান মাসে ইতিকাফ করা নিয়ম, কখন করবেন ও কত দিন করবেন

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১৮ ১১:৪০:১২
রমজান মাসে ইতিকাফ করা নিয়ম, কখন করবেন ও কত দিন করবেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান একটি বিশেষ মাস, যেখানে মুসলিমরা নিজেদের আত্মিক পরিশুদ্ধি লাভের জন্য নানান ইবাদত ও তাসফির মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো "ইতিকাফ", যা আল্লাহর আনুগত্যের জন্য মসজিদে কিছু সময় কাটানো। ইতিকাফের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়ার সব ব্যস্ততা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করার চেষ্টা করেন।

ইতিকাফের সময় একজন মুসলিম তার মন ও শরীরকে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর ইবাদতে নিবেদিত করেন এবং জীবনের দুনিয়াবি চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে তাঁর প্রতি একাগ্রতা প্রকাশ করেন। এই ইবাদত মূলত রমজানের শেষ ১০ দিনে বিশেষভাবে হয়ে থাকে, তবে এর প্রকারভেদ রয়েছে।

ইতিকাফের ধরন

১. সুন্নত ইতিকাফ: রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ, যা সুন্নত মুয়াক্কাদা কিফায়া হিসেবে পরিচিত।

২. নফল ইতিকাফ: যে কোনো সময়ের জন্য ইতিকাফ করা, যা ঐচ্ছিক।

৩. ওয়াজিব ইতিকাফ: কোনো মানতের কারণে ইতিকাফ করা, যা ওয়াজিব হয়ে থাকে।

রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফের গুরুত্ব

রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা এক বিশেষ ধরনের আল্লাহর প্রতি নিবেদন। নবী (সা.) নিজের জীবনেও এই সময় ইতিকাফ করেছেন এবং সাহাবিগণও এর অনুসরণ করেছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, "নবী (সা.) তাঁর জীবনের শেষ পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন, এবং তাঁর স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন।" (বুখারি, হাদিস: ১,৮৬৮; মুসলিম, হাদিস: ২,০০৬)

রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, "যখন রমজানের শেষ দশ দিন আসত, তখন আমি বেশি ইবাদত করার জন্য প্রস্তুতি নিতাম এবং পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে রাখতাম।" (বুখারি, হাদিস: ১,০৫৩) এটি একটি নিখুঁত উদাহরণ, যে কিভাবে ইতিকাফের মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর কাছে আরও নিবিড়ভাবে পৌঁছাতে পারে।

এছাড়া, রাসুল (সা.) বলেছেন, "আমি প্রথম ১০ দিন, এরপর মধ্যবর্তী ১০ দিন, এবং শেষে শেষ ১০ দিনে ইতিকাফ করেছি, কারণ আল্লাহ আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন যে কদরের রাতটি শেষ ১০ দিনে রয়েছে।" (মুসলিম, হাদিস: ১,৯৯৪)

রমজানের শেষ ১০ দিনে ইতিকাফ করা একটি আধ্যাত্মিক দায়বদ্ধতা। যদি একজন ব্যক্তি ইতিকাফ করেন, তবে সেটি সমাজের জন্য সুন্নত হিসেবে আদায় হয়ে যায়। তবে, যদি কেউ ইতিকাফ না করেন, তবে সবাই গুনাহগার হবে।

ইতিকাফ শুধুমাত্র এক ব্যক্তি নয়, একটি পুরো সমাজের জন্য বরকত নিয়ে আসে। এটি মুসলিম সমাজে একাত্মতা, শান্তি এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের নিদর্শন হয়ে দাঁড়ায়। এজন্যই, রমজানের শেষ ১০ দিন এক বিশেষ সময়, যেখানে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর কাছে পরিশুদ্ধ করতে পারে এবং সমাজকে একযোগে আল্লাহর কাছে নিবেদিত হতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।

এতসব কারণে, রমজানের শেষ ১০ দিনে ইতিকাফের মাধ্যমে একজন মুসলিম নিজেকে আল্লাহর নৈকট্যে নিয়ে গিয়ে আত্মিক শান্তি অর্জন করতে পারে, যা সারা জীবনের জন্য এক অমূল্য সম্পদ।

আব্দুর রহিম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে