ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১

ইফতারের দোয়া ও ফজিলত, ইফতারে কি খাবে, কি খাবেন না

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১৬ ১৮:১৬:৩৩
ইফতারের দোয়া ও ফজিলত, ইফতারে কি খাবে, কি খাবেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান মাস হলো আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সময়। এই পবিত্র মাসে রোজা রাখা ফরজ এবং সুবহে সাদিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। রোজা শেষ হওয়ার পর যা আমরা করি, তা হলো ইফতার—এটা শুধু শরীরিক পিপাসা মেটানোর সময় নয়, বরং আধ্যাত্মিক শান্তি এবং ভ্রাতৃত্ববোধের প্রতিফলন।

এ সময় একটি বিশেষ দোয়া পাঠ করা হয়, যা রোজাদারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন, জেনে নেওয়া যাক ইফতারের দোয়া এবং এর অর্থ:

ইফতারের দোয়া

আরবি উচ্চারণ:

بسم الله اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ

বাংলা উচ্চারণ:

আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।

বাংলা অর্থ:

হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমার দান করা রিজিক দিয়ে ইফতার করছি।

এ দোয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য এক মহান সময়ের সূচনা, যখন আত্মা আল্লাহর কাছে নিবেদিত হয়। হাদিসে রয়েছে, রোজাদারের আনন্দদায়ক দুই মুহূর্ত—একটি ইফতারের সময়, এবং অপরটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার সময়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় তারা, যারা আগেভাগে ইফতার করে।" (তিরমিজি)

ইফতার: সময় এবং সুন্নত

ইফতারের সময় সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিত। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা সুন্নত। রাসুল (সা.) ইফতার করতেন কয়েকটি টাটকা খেজুর দিয়ে বা, যদি তা না পাওয়া যেতো, শুকনা খেজুর দিয়ে অথবা কয়েক ঢোক পানি পান করতেন।

একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিসে বলা হয়েছে, "ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া, ন্যায়বিচারক বাদশাহর দোয়া এবং মজলুমের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না।"

ইফতার ও সুষম খাদ্যাভ্যাস

রমজান মাসে আমাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ঘটে, তবে সুষম খাদ্য গ্রহণ করা অপরিহার্য। পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ পরামর্শ দিয়েছেন, ইফতার যেন সহজপাচ্য এবং স্বাস্থ্যকর হয়, কারণ দীর্ঘ সময়ের রোজা শেষে ভারী খাবার গ্রহণের ফলে বদহজম হতে পারে।

ইফতারের জন্য সুপারিশকৃত খাবার:

খেজুর এবং পানি: ইফতার শুরু করতে ১-২টি খেজুর দিয়ে শুরু করুন এবং কিছু পানি পান করুন।

হালিম: হালিমে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাটের সঠিক সমন্বয় থাকে, যা শরীরকে শক্তি দেয়।

তরল খাবার: স্যুপ, ফলের জুস, বা স্মুদি ইফতারের জন্য আদর্শ, যা সহজে হজম হয়।

সবজি ও প্রোটিন: ইফতারে সবজি, ডাল, চিকেন বা খিচুড়ি খাওয়া ভালো।

ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলুন: ভাজা-পোড়া বা অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবারের পরিবর্তে দই বা ফলের মিক্সড স্যালাড গ্রহণ করুন।

ইফতারের ফজিলত

রোজাদারকে ইফতার করানোর জন্য আল্লাহ তায়ালা অনেক সওয়াব দান করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করায়, তারও সওয়াব হবে। এমনকি, যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজাদারকে খাবার খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন আমার হাউস থেকে কাউসারের পানি পান করিয়ে পরিতৃপ্ত করবেন এবং জান্নাতে প্রবেশের আগে সে আর তৃষ্ণার্ত হবে না।

গরিবদের ইফতার করানো

যে ব্যক্তি গরিব রোজাদারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে এবং সেই টাকা দিয়ে সে ইফতার করে, সে ইফতার করানোর সওয়াব পাবে। এটাও রোজাদারকে সহায়তা করার অন্তর্ভুক্ত।

ইফতার শুধু খাদ্য গ্রহণের একটি মুহূর্ত নয়, এটি এক মহৎ কর্ম, যা আত্মশুদ্ধি, ভাইচারা এবং আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করে। রমজান মাসে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং আদর্শ ইফতার প্রথা পালন করে আমরা এই মহান মাসের ফজিলত লাভ করতে পারি।

এম/আর/এ

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে