ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১

শবেবরাতের কোন কোন দিনে রোজা রাখতে হয়

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১৩ ২২:২৭:৪৪
শবেবরাতের কোন কোন দিনে রোজা রাখতে হয়

মুসলিম জগতে শবেবরাত বা ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ এমন একটি রাত, যা শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাতে আসে এবং রহমত, ক্ষমা ও মাগফিরাতের বিশেষ সময় হিসেবে গণ্য হয়। যদিও ‘শবেবরাত’ শব্দটি হাদিসে নেই, তবে এটি ফারসি শব্দ, যেখানে ‘শব’ অর্থ রাত এবং ‘বরাত’ অর্থ মুক্তি বা নাজাত। এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে কোরআনে স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকলেও, হাদিসে এর গুরুত্ব ও আমলের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা পাওয়া যায়।

নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, "আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষী ছাড়া সকলকে ক্ষমা করেন" (ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৫৬৬৫)। এই রাতে আল্লাহর রহমত লাভের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যা প্রতিটি মুসলমানকে একনিষ্ঠভাবে পালন করা উচিত। চলুন, শবেবরাতের চারটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে বিস্তারিত জানি:

১. নফল নামাজ ও দীর্ঘ সিজদা

শবেবরাতে নফল নামাজ পড়া বিশেষ গুরুত্ব পায়। নবী (সা.) দীর্ঘ নামাজে দাঁড়িয়ে এমন সিজদা করেছিলেন, যার কারণে সাহাবি আয়েশা (রা.) চিন্তা করেছিলেন, হয়তো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। এই রাতে নফল নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে তাওবা ও ক্ষমা চাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নবী (সা.) নিজেই এই রাতে আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশের কথা বলেছেন, "এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত, আল্লাহ বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন" (শুআবুল ঈমান, হাদিস: ৩৫৫৪)। অতএব, এই রাতে দীর্ঘ কিরাত ও সিজদা করে নামাজ পড়া বিশেষ এক আমল হিসেবে পালন করতে হবে।

২. তাওবা ও ইস্তিগফার

শবেবরাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমত ও ক্ষমার দৃষ্টি দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যখন অর্ধ শাবানের রাত আসে, আল্লাহ প্রথম আকাশে নেমে মুশরিক ও বিদ্বেষী ছাড়া সকলের গুনাহ মাফ করে দেন" (মুসনাদে বাজজার, হাদিস: ৮০)। এই রাতে তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের নিরাপত্তা ও হেফাজতের জন্য দোয়া করা উচিত।

৩. কোরআন তিলাওয়াত

কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। সাহাবি আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, "যারা কোরআন বেশি বেশি তিলাওয়াত করে, তারা আল্লাহ তাআলার পরিবার" (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২১৫)। তাই, এই রাতে কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভের চেষ্টা করতে হবে।

৪. পরের দিন রোজা রাখা

শবেবরাতের পরের দিন রোজা রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। নবী (সা.) বলেছেন, "১৫ শাবানের রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং পরদিন রোজা রাখো" (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৮)। যদিও হাদিসটির সনদ কিছুটা দুর্বল, তবুও এটি আমলযোগ্য, বিশেষত শাবান মাসে নফল রোজা রাখার বিষয়টি সহিহ হাদিসে এসেছে। এছাড়া, আইয়ামে বীজ (১৩, ১৪ ও ১৫ শাবান) রোজা রাখারও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

এ রাতের রহমত ও বরকত লাভের জন্য আমাদের উচিত সব ধরনের বিদআত থেকে বিরত থেকে শুদ্ধভাবে এসব আমল করা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে শবেবরাতের এই বিশেষ রাতের ফজিলত ও মাগফিরাত দান করুন। আমিন।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে