ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১

আবু সাঈদের মৃত্যু: জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এলো নির্মম সত্য

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১৩ ১২:৪৩:১৯
আবু সাঈদের মৃত্যু: জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এলো নির্মম সত্য

বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। গণআন্দোলনের সেই উত্তাল সময়ে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের নির্মম মৃত্যুর ঘটনা আলোড়ন তোলে দেশ-বিদেশে। এই ঘটনাকে ঘিরে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের সাম্প্রতিক তদন্ত প্রতিবেদন এক চাঞ্চল্যকর সত্য উন্মোচন করেছে।

একজন প্রতিবাদীর অন্তিম মুহূর্ত

জেনেভায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্ক জানান, জাতিসংঘের তদন্ত দল আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনার গভীরে গিয়ে এক ভয়াবহ চিত্র আবিষ্কার করেছে। প্রতিবেদন অনুসারে, বিক্ষোভ চলাকালীন আবু সাঈদ পুলিশের সামনে দু’হাত ছড়িয়ে উচ্চস্বরে বলেছিলেন, ‘আমাকে গুলি করুন।’ মুহূর্তের মধ্যেই সেই দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়ে, যা পরবর্তীতে হয়ে ওঠে আন্দোলনের প্রতীক।

প্রমাণের আলোকে নির্মম বাস্তবতা

জাতিসংঘের তদন্ত দল আধুনিক প্রযুক্তি, ভিডিও ফুটেজ, ভূ-অবস্থান বিশ্লেষণ এবং ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ চিত্র পুনর্নির্মাণ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৪ মিটার দূর থেকে শটগান দিয়ে আবু সাঈদকে অন্তত দুবার গুলি করা হয়েছিল। সেই আঘাতের ধরন ও ক্ষতের বিশ্লেষণে বোঝা যায়, এটি ছিল পরিকল্পিত এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।

সরকারের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই সহিংসতা ছিল ‘একটি পরিকল্পিত ও সমন্বিত কৌশলের’ অংশ। ভলকার টুর্ক বলেন, "সাবেক সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে জনগণের কণ্ঠরোধ করতে শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেফতার ও নির্যাতন চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধের আওতাভুক্ত হতে পারে।"

তিনি আরও বলেন, “আমাদের হাতে যে প্রমাণ রয়েছে, তা রাষ্ট্রীয় সহিংসতার এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে, যা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য চরম হুমকি।”

ন্যায়বিচারের দাবি ও ভবিষ্যতের করণীয়

প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় গত সেপ্টেম্বরে তদন্ত দল পাঠায়। এতে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, ফরেনসিক চিকিৎসক ও অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তাদের কাজ ছিল ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত পরিচালনা করা।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনের পর, দেশে-বিদেশে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ যে ন্যায়বিচার ও দায়বদ্ধতার ওপর নির্ভর করছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে