ঢাকা, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১

শবে বরাতের রাতে পালনীয় বিশেষ ইবাদতসমূহ

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১০ ১৬:২১:৩২
শবে বরাতের রাতে পালনীয় বিশেষ ইবাদতসমূহ

শবে বরাত, যাকে লাইলাতুন নিসফা মিন শাবানও বলা হয়, মুসলিম বিশ্বে এক বিশেষ রাত হিসেবে পরিচিত। এটি হিজরি বর্ষের অষ্টম মাসের ১৪ তারিখ রাত, যা পৃথিবীজুড়ে বিশেষ মর্যাদার রাত হিসেবে পালন করা হয়। এই রাতকে সাধারণত "ক্ষমা ও রহমতের রাত" হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কারণ আল্লাহ তাআলা এই রাতে তাঁর বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন এবং তাদের উপর বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন। চলুন, শবে বরাতের রাতে কোন কোন ইবাদত করা উচিত, তা বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক:

১. নফল নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কাছে আসা

শবে বরাতের রাতে আল্লাহর কাছ থেকে মাগফিরাত (ক্ষমা) লাভের অন্যতম মাধ্যম হলো নফল নামাজ। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই রাতে অধিক নফল নামাজ পড়তেন, এবং এর মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত রয়েছে। হাদিসে এসেছে যে, "এই রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ দয়া প্রদর্শন করেন এবং তাদের গুনাহ মাফ করেন।" (তাবারানি) অতএব, দীর্ঘ সিজদা ও রুকু সহ নামাজ পড়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

২. বিশেষ দোয়া ও তাসবিহের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া

শবে বরাতের রাত হলো আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভের সুযোগ। এই রাতে আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করেন এবং তাঁর বান্দাদের প্রতি স্নেহশীল হন। হাদিসে এসেছে, "এই রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করেন, তবে একমাত্র মুশরিক ও দ্বারী (শত্রুদের মধ্যে) কেউ এ রাতে ক্ষমা পায় না।" (বুখারি) অতএব, এই রাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া পড়া উচিত:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ (আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুনুনি)رَبِّ أَوْزِعْنِيٓ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ (রাব্বি আউজিযনি আন আশকুরা নিয়ামাতাকা)

৩. তওবা ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে ক্ষমা লাভ

শবে বরাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো তওবা করা। আল্লাহ তাআলা এই রাতে তাঁর বান্দাদের সারা বছরের গুনাহ মাফ করে দেন যদি তারা আন্তরিকভাবে তওবা করে। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, "এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন, তবে যারা হারাম কাজের মধ্যে ডুবে আছেন, তাদের জন্য ক্ষমা নেই।" (তিবরানি) অতএব, এই রাতে ইস্তেগফার অর্থাৎ গুনাহ মাফ চাইতে হবে এবং সত্যিকার অর্থে তওবা করতে হবে।

৪. শবে বরাতের রাতে রোজা রাখা

শবে বরাতের পরদিন রোজা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শবে বরাতের পরদিন রোজা রাখার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। এটি একটি অনুশীলন যা আল্লাহর নিকট মর্যাদা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। হাদিসে এসেছে, "যে ব্যক্তি শবে বরাতের পরদিন রোজা রাখে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।" (ইবনে মাজাহ)

৫. তাহলিল ও তাসবিহ পড়ার মাধ্যমে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করা

শবে বরাতের রাতে আল্লাহর জিকির এবং তাসবিহ পড়া অন্তরের পরিশুদ্ধি এবং আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ রহমত পাওয়ার এক অন্যতম উপায়। "সুবহানাল্লাহ" (পবিত্র আল্লাহ) ও "আল্লাহু আকবার" (আল্লাহ মহান) এর মতো তাসবিহ পড়া এ রাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু" (আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই) উচ্চারণও আল্লাহর নিকট প্রিয়।

৬. বিশ্বনবির প্রতি শ্রদ্ধা ও দোয়া পাঠ

শবে বরাতের রাতে বিশ্বনবি মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সালাম ও দরুদ পাঠ করা উত্তম। এই রাতেই আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেন এবং তাঁর উম্মতকে মহান পুরস্কারে সম্মানিত করেন। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরুদ পাঠ করা এক ধরনের ইবাদত, যা আল্লাহ তাআলার কাছে প্রিয়।

৭. অন্যদের জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা

শবে বরাতের রাতে নিজের পাশাপাশি অন্যদের জন্যও দোয়া করা উচিত। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশীদের জন্য দোয়া করা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয়। বিশেষভাবে তাদের জন্য দোয়া করতে হবে যারা আপনাদের কাছে মাফ চেয়েছেন এবং যারা আপনার সাথে সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছেন, তাদের জন্যও দোয়া করতে হবে যাতে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করেন এবং সবার মধ্যে ঐক্য ও শান্তি স্থাপন হয়।

শবে বরাতের এ সমস্ত ইবাদত আল্লাহর কাছে অতুলনীয় রহমত ও ক্ষমা লাভের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই, আমরা সবাইকে এই রাতকে ইবাদত-বন্দেগি এবং ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে পার করার আহ্বান জানাই, যাতে আমরা আল্লাহর কাছ থেকে পূর্ণ দয়া ও মাগফিরাত লাভ করতে পারি।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে