ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১

শাবান মাসের ফজিলত ও রমজানের জন্য প্রস্তুতির মাস

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ০৭ ১১:৫৪:৩৪
শাবান মাসের ফজিলত ও রমজানের জন্য প্রস্তুতির মাস

হিজরি বর্ষপঞ্জির পরিপ্রেক্ষিতে, পবিত্র রমজান মাসের পূর্ববর্তী মাস শাবান, যা ইবাদতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। রমজানের আগমনের প্রস্তুতিতে শাবান মাসে বিশেষ আমল পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা ইসলামের শিক্ষা ও মহানবী (সা.)-এর জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

শাবান মাসের বিশেষত্ব

শাবান মাসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা লাভের এবং ইবাদত করার জন্য এক অতিরিক্ত সুযোগ রয়েছে। মহানবী (সা.) এই মাসে বিশেষ করে রোজা রাখতেন এবং আমল করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে বরকত লাভের জন্য দোয়া করতেন।

মহানবী (সা.)-এর শাবান মাসের আমল

মহানবী (সা.) এই মাসে বেশ কিছু বিশেষ আমল পালন করতেন, যা তাঁর উম্মতকে নির্দেশনা ও পথপ্রদর্শন হিসেবে পালন করতে বলতেন:

১. মধ্য শাবানের রাতে ক্ষমার ঘোষণার সুযোগ: শাবান মাসের মধ্যরাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে সৃষ্টির জন্য ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। হাদিসে এসেছে, “আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে আত্মপ্রকাশ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া সকলকে ক্ষমা করেন।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৯০)

২. রোজা রাখার তাগিদ: শাবান মাসে রোজা রাখার ব্যাপারে মহানবী (সা.)-এর নির্দেশনা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “যদি তুমি শাবান মাসে রোজা না রাখো, তবে রমজান মাসের শেষের দিকে এক বা দুই দিন রোজা রাখো।” (আবু দাউদ, হাদিস: ২৩২৮)

৩. বরকত লাভের জন্য দোয়া: শাবান মাসে আল্লাহর কাছ থেকে বরকত লাভের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) রজব ও শাবান মাসের জন্য বিশেষ দোয়া করতেন। আনাস বিন মালিক (রা.)-এর বর্ণনায় এসেছে, “রাসুলুল্লাহ (সা.) রজব মাসে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দাও এবং আমাদের রমজান মাসে পৌঁছাতে সাহায্য করো।’” (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস: ১৩৬৯)

৪. শাবান মাসের হিসাব রাখা: মহানবী (সা.) এই মাসে হিসাব সংরক্ষণে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। তিনি রমজানের চাঁদ দেখার পর রোজা শুরু করতেন, আর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলে শাবান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করে রোজা রাখতেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস: ২৩২৫)

শাবান মাসের প্রতি যত্নশীল হওয়ার কারণ

মহানবী (সা.) শাবান মাসের প্রতি কেন বিশেষ যত্নশীল ছিলেন, তা কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণে ব্যাখ্যা করা যায়:

১. আমলনামার উত্তোলন: শাবান মাসে বান্দার আমলনামা আল্লাহর কাছে উত্থাপন করা হয়। মহানবী (সা.) শাবান মাসে রোজা রেখে তার আমল আল্লাহর কাছে উত্থাপিত হোক, এমনটাই পছন্দ করতেন।

২. ইবাদতের উদাসীনতা: শাবান মাস এমন একটি সময়, যখন মানুষের মধ্যে রমজান বা রজব মাসের মধ্যে অধিক ইবাদত করার উদাসীনতা দেখা দেয়। মহানবী (সা.) এ সময়টিকে উপেক্ষা না করে বেশি পরিমাণ ইবাদত করার জন্য উম্মতকে উৎসাহিত করতেন।

৩. রমজানের জন্য প্রস্তুতি: শাবান মাসের অধিক ইবাদতের মাধ্যমে মহানবী (সা.) রমজান মাসের প্রস্তুতি নিতেন। এটি ছিল একটি সঠিক প্রস্তুতি, যা পরবর্তীতে রমজানে প্রবেশের জন্য অপরিহার্য ছিল।

শাবান মাসে ইবাদত করার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজেকে রমজান মাসের জন্য প্রস্তুত করে, এবং মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা অনুসরণ করে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা ও বরকত লাভের সুযোগ গ্রহণ করে। এই মাসের প্রতি যত্নশীল হয়ে আমরা আমাদের আমল এবং রমজান মাসে পবিত্রতা অর্জন করতে পারি। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ এবং রমজান লাভের সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে