ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১

নির্বাচনী আচরণবিধিতে বড় পরিবর্তনের পথে নির্বাচন কমিশন

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ জানুয়ারি ২১ ১২:২০:৩২
নির্বাচনী আচরণবিধিতে বড় পরিবর্তনের পথে নির্বাচন কমিশন

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গঠিত সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচনী আচরণবিধিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুপারিশগুলো চূড়ান্তভাবে পর্যালোচনার পর আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা জারি করা হবে। এর আগে ইসি সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের মধ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছে, যাতে কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়।

প্রস্তাবিত পরিবর্তনের দিকনির্দেশনা

সংস্কার কমিশন নির্বাচনসংক্রান্ত আচরণবিধিতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • ব্যানার ও পোস্টার নিষিদ্ধ: প্রচারণায় প্রচলিত ব্যানার, তোরণ এবং পোস্টারের পরিবর্তে লিফলেট ব্যবহারের পরামর্শ।
  • প্রচারমাধ্যমে সমান সুযোগ: প্রার্থীদের জন্য পত্রিকা এবং সরকারি গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন ও প্রচারের সমান সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ।
  • সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ: সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪ অনুসারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণার নিয়মকানুন নির্ধারণ।
  • প্রার্থীদের সরাসরি প্রচারণা: ভোটারদের সঙ্গে প্রার্থীদের সরাসরি মতবিনিময়ের সুযোগ নিশ্চিত করা।
  • রাজনৈতিক আচরণবিধি: ১৯৯০ সালের তিন জোটের রূপরেখার মতো রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য পৃথক আচরণবিধি তৈরির প্রস্তাব।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সংস্কার প্রস্তাব

সংস্কার কমিশনের সুপারিশে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের প্রস্তাব রয়েছে।

  1. স্থায়ী স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন: স্থানীয় সরকারের স্থায়িত্ব এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে এই কমিশনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
  2. জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন: জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তাব এসেছে।
  3. নির্বাচন নির্দলীয় করার উদ্যোগ: স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করার জন্য আইন সংশোধনের পরামর্শ।
  4. মেম্বারদের ক্ষমতা বৃদ্ধি: মেম্বার বা কাউন্সিলরদের কার্যকরী ভূমিকা নিশ্চিত করতে নতুন নিয়ম প্রণয়নের সুপারিশ।

ড. বদিউল আলম মজুমদারের বক্তব্য

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার জানিয়েছেন, "নির্বাচনব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুষ্ঠু করতে আমরা নির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। বিশেষত দুর্বৃত্ত ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার বিষয়ে সুস্পষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে।"

তিনি আরও বলেন, "নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারে চারটি প্রধান অংশীজন রয়েছে—সরকার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ জনগণ। তবে জনগণ যদি সোচ্চার থাকে, তাহলে এই প্রক্রিয়া সফলভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব।"

ইসির পরবর্তী পদক্ষেপ

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে প্রাথমিক প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। কমিশন আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেওয়ার পর পুরো প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হবে।

সুপারিশ তৈরির প্রক্রিয়া

গত বছরের ৩ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করে। প্রায় তিন মাসের কাজ শেষে ১৫ জানুয়ারি কমিশন তাদের সুপারিশের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করে।

জনগণের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সুপারিশগুলো নির্বাচনী পরিবেশ আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে সাহায্য করবে। তবে এই প্রক্রিয়া সফল করতে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনগণ যদি সচেতন থাকে, তবে নির্বাচনব্যবস্থায় সুশাসন নিশ্চিত করা সহজ হবে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে