ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

ব্রেকিং নিউজ: শেখ হাসিনা সহ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না যারা

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ জানুয়ারি ১৬ ০৯:৩৭:৫১
ব্রেকিং নিউজ: শেখ হাসিনা সহ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না যারা

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগিত ব্যক্তিরা ভবিষ্যতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এমনকি তারা কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব বা সদস্য পদেও থাকতে পারবেন না। বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়েছে।

নির্বাচনে অযোগ্যতার শর্তাবলী

প্রতিবেদন অনুসারে, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অমানবিক নির্যাতন, দুর্নীতি, অর্থ পাচার বা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। এসব অপরাধে অভিযুক্ত হলে, তারা কোনো দলের সাধারণ সদস্য বা কমিটির পদেও থাকতে পারবেন না।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংবিধানের ৬৬(২)(ছ) অনুচ্ছেদের অধীনে বিশেষ আইন প্রণয়ন করে এ বিধান কার্যকর করার সুপারিশ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে অভিযোগ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গণহত্যা এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গুম ও খুনের ঘটনাগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় আদালত কর্তৃক চার্জশিট গৃহীত হলে তারা নির্বাচনে অযোগ্য হবেন।

বর্তমান আইন অনুসারে কেবল সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই নির্বাচনে অযোগ্য হন। কিন্তু নতুন প্রতিবেদনে চার্জশিট গৃহীত হওয়া মাত্রই প্রার্থী অযোগ্য করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সংশোধনী ও বিশেষ সুপারিশ

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের জন্য প্রতিবেদনটিতে আরও বেশ কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  1. ‘না’ ভোটের বিধান চালু: কোনো প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে পারবে না। কোনো আসনে ৪০% ভোট না পড়লে পুনর্নির্বাচনের বিধান কার্যকর হবে।
  2. একাধিক আসনে প্রার্থী হওয়া বন্ধ: একই ব্যক্তি একাধিক আসনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
  3. অনলাইন ভোটিং: প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে পোস্টাল ব্যালট বা অনলাইন ভোটিংয়ের সুযোগ দেওয়া।
  4. দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিতকরণ: একই ব্যক্তি একসঙ্গে দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা হতে পারবেন না। এছাড়া, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন।
  5. নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা: সুষ্ঠু নির্বাচনে ব্যর্থ হলে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইভিএম বাতিল ও নতুন ব্যবস্থাপনা

নির্বাচনে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহারের বিধান বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে, নির্বাচনকালীন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সংসদে উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব

প্রতিবেদনে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ১০০ আসনের এই উচ্চকক্ষ গঠনের জন্য দলগুলোর ভোটের হারের ভিত্তিতে আসন বণ্টন এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

হলফনামা যাচাই ও সংসদ সদস্যদের সুবিধা হ্রাস

প্রতিটি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাইয়ের জন্য দলের পক্ষ থেকে হলফনামা জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধির মিথ্যা তথ্য প্রমাণিত হলে তার সদস্যপদ বাতিল করা হবে।

এছাড়া সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি, ভাতা, প্রটোকল সুবিধা কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

সংসদ সদস্য আচরণবিধি প্রণয়ন

প্রতিবেদনে সংসদ সদস্যদের জন্য বিশেষ আচরণবিধি প্রণয়ন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলন ও কমিশনের বক্তব্য

বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এটিকে পুনর্গঠনের জন্য আমরা সৎভাবে কাজ করেছি। আমাদের লক্ষ্য নির্বাচনকে স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করা।”

তিনি আরও বলেন, “শেষ তিনটি নির্বাচনে যারা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা প্রয়োজন।”

উপসংহার

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের এ সুপারিশগুলো কার্যকর হলে বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। এখন দেখার বিষয়, সুপারিশগুলো কত দ্রুত এবং কীভাবে বাস্তবায়িত হয়।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে