ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

Category Name: জাতীয়
Remove URL String Output: ""
Base URL: https://www.24updatenews.com/
URL: 
Final URL: https://www.24updatenews.com/group/20

সচিবালয়ের পর এবার আদালতে আগুন

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ জানুয়ারি ১০ ১৩:৪৫:৫২
সচিবালয়ের পর এবার আদালতে আগুন

২০০৯ সালের বিডিআর পিলখানা হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা বিস্ফোরক মামলার দীর্ঘসূত্রতায় কারাবন্দি ৮৩৪ জওয়ানের মুক্তি আবারও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বকশিবাজারে আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে তাদের জামিন শুনানির কথা ছিল। তবে এর ঠিক আগের রাতেই অস্থায়ী আদালত কক্ষে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে আদালত কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়, যা বন্দিদের মুক্তির দাবি আরও জটিল করে তুলেছে।

বুধবার রাত ৩টার দিকে অস্থায়ী আদালতের একটি কক্ষে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও বাধার কারণে কার্যক্রম চালাতে পারেনি। আদালতের এজলাস কক্ষ পুড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার নির্ধারিত শুনানি বাতিল করা হয়। বিচারক ও প্রসিকিউশন টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানায়, ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত আদালত কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

পুলিশ জানিয়েছে, আদালতের প্রধান দুটি ফটক তালাবদ্ধ ছিল। রাতে কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তি তালা ভেঙে চলে যায়। তদন্তের আগেই এটি নাশকতা কি না, তা বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গত কয়েক দিন ধরে বন্দিদের স্বজনরা জামিন ও মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে সক্রিয়। মঙ্গলবার শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি, বুধবার শহীদ মিনারে প্রতিবাদ এবং বৃহস্পতিবার দিনভর সড়ক অবরোধ করে তারা তিন দফা দাবি জানান। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

দীর্ঘসূত্রিতা এড়িয়ে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা।

বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা।

এক সংবাদ সম্মেলনে বিডিআরের চাকরিচ্যুত জওয়ানরা অভিযোগ করেন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে এবং বিচার প্রক্রিয়াকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে।

আলিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের মাঠ থেকে আদালত সরানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলেও তারা তা অস্বীকার করেছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, মাঠটি অবৈধভাবে দখল করে সেখানে আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।

শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, "আমাদের যৌক্তিক দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আগুন লাগানো হতে পারে।"

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান নাসির বলেন, "বিচার কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হওয়ায় নিরপরাধ জওয়ানরা বছরের পর বছর কারাবন্দি। দ্রুত বিচারের মাধ্যমে নিরপরাধদের মুক্তি দেয়া উচিত।"

তিনি আরও বলেন, "পিলখানায় পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের বিচার সেনা আইনে করা উচিত ছিল। কিন্তু তৎকালীন সরকার প্রচলিত আইনে বিচার করে দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি করেছে।"

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এটি বিদ্রোহ হিসেবে চিহ্নিত করে দুটি মামলা দায়ের করে—একটি হত্যা মামলা ও অন্যটি বিস্ফোরক আইনে।

হত্যা মামলায় ২০১৩ সালে রায় হয়। এতে ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। তবে বিস্ফোরক মামলার বিচার মাঝপথে থেমে যায়। ২০২০ সালে করোনার কারণে বিশেষ আদালত বন্ধ হয়ে যায়, যা এখনো পুনরায় শুরু হয়নি।

বুধবার রাতের অগ্নিকাণ্ডকে কেন্দ্র করে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহল এটিকে নাশকতা কি না তা তদন্ত করে দেখার কথা বলেছে। অন্যদিকে আন্দোলনকারী বন্দিদের স্বজন ও শিক্ষার্থীরা এটিকে তাদের দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করছেন।

বিডিআর পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিস্ফোরক মামলার বিচার দীর্ঘসূত্রিতায় ভুগছে। বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে সরকার দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেবে বলে আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আদালতে অগ্নিকাণ্ড ও আন্দোলন পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। সরকারের উচিত স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা এবং নিরপরাধদের মুক্তি নিশ্চিত করা।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ