ঢাকা, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১

বিএনপিকে নিয়ে মাসুদ সাঈদীর পোস্ট ভাইরাল: সারা দেশে উঠলো আলোচনার ঝড়

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ জানুয়ারি ১০ ০১:৩২:৫৮
বিএনপিকে নিয়ে মাসুদ সাঈদীর পোস্ট ভাইরাল: সারা দেশে উঠলো আলোচনার ঝড়

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপির মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে মাসুদ সাঈদীর একটি ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হয়ে গেছে। সাঈদী, যিনি জিয়ানগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে, গত ৯ জানুয়ারি রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এই পোস্টটি দেন। পোস্টটি নিয়ে এখন বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

পোস্টে তিনি বিএনপির সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সম্পর্কে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি মনে করেন, এই ধরনের বক্তব্য বিএনপির জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যে চরম বিভাজন সৃষ্টি করবে এবং এর ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে।

পাঠকদের জন্য মাসুদ সাঈদীর পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

‘বিএনপির সহযোগী বা অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রোগ্রামে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সম্পর্কে কিছু বিদ্বেষমূলক ফেস্টুন ও মঞ্চে রাখা বক্তব্য বিএনপি জামায়াতের সম্পর্কের মধ্যে চরমভাবে বিভাজন উস্কে দেবে।

আজকের এই প্রোগ্রামের পরে দেশবাসীর মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের অনুমোদন নিয়েই বিএনপির কিছু নেতা এসব বক্তব্য/বিবৃতি দিচ্ছেন কিনা?’‘কথাগুলো লিখবো না ভাবছিলাম, তবুও লিখছি। কোনো রাজনৈতিক বা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে লিখছি না। লিখছি মনের তাগিদে, বিবেকের তাড়নায়...’

‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নামক যে ব্যবসা বিএনপি করতে যাচ্ছে সে ব্যবসা যে একটি অলাভজনক ব্যবসা এবং এতে চেতনা ব্যবসায়ী দল ও দেশের ক্ষতি হয়- তা তো এখন আর কাউকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। চেতনার এই ব্যবসা করে আওয়ামী লীগই তার পুঁজি ঠিক রাখতে পারে নাই, আর নব্য যারা এই ব্যবসা করার চেষ্টা করছেন তারা তো তাদের আম ছালা সবই শেষ করবেন।

খাছিরাত দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ।’

‘বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কাছে জিজ্ঞাসা- আওয়ামী লীগ যা করে নিজে ও দেশটাকে ধ্বংস করেছে, সেইসব কাজ বিএনপির মতো জনপ্রিয় একটি দলের করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত? কতটা গ্রহণযোগ্য?’

‘বরং দেশের মানুষ তো একথাই বলছে, ৭১’র চেতনা দিয়ে বিরোধী মতকে দমন করা, জামায়াত-শিবিরকে ধর্ম ব্যবসায়ী, রগ কাটা বলে ট্যাগ দেওয়া, ৭২ এর সংবিধানে আস্থা রাখা— এসবের জন্য তো আওয়ামী লীগই ছিল, নতুন করে বিএনপিকে আর কি দরকার!

‘লীগের পথে কোনো কল্যাণ নেই। বরং লীগের পথ যারাই ধরবে, তাদেরকেও দেশের মানুষ বর্জন করবে, এটাই প্রমাণিত। সুতরাং বিভাজনের রাজনীতি, সংঘাত-সংঘর্ষ সৃষ্টির রাজনীতি এড়িয়ে যাওয়াই কল্যাণকর।

এসব চলতে থাকলে দুটি দলের সম্পর্কের মারাত্বক অবনতি হবে। উভয় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যুদ্ধাংদেহী একটা অবস্থা সৃষ্টি হবে, যা মোটেই কাম্য নয়।’

‘ইতিমধ্যেই উভয় দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তিক্ততা সৃষ্টি হয়ে গেছে। এমন চলতে থাকলে দিনশেষে তা আরো বাড়তে থাকবে এবং তাতে ক্ষতি হবে দেশের, ক্ষতি হবে জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দেশের আশি ভাগ জনগোষ্ঠীর।’

‘২০০১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘ ২৩ বছরে একটি বারের জন্য বিএনপি নেতৃবৃন্দের কাছে শিবিরকে রগ কাটার দল বলে মনে হয় নাই, জামায়াতকে ধর্ম ব্যবসায়ী মনে হয় নাই; এমনকি জামায়াতকে রাজাকারও মনে হয় নাই— কিন্তু ২৩ বছর পর হঠাৎ করে বিএনপির কিছু নেতার কাছে জামায়াতকে ধর্ম ব্যবসায়ী আর রাজাকার মনে হলো কেন?’

‘তাহলে কি বিএনপি এতদিন ভুল পথে ছিলো? তাহলে সে ভুলের জন্য তো বিএনপিকে আগে জাতির সামনে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ, এরপর তাদের নতুন বক্তব্য জাতির সামনে পেশ করা উচিৎ।

কিন্তু শুধু ভিন্ন মতের কিছু ভোট পেয়ে সরকার গঠনের আশায় আওয়ামী স্টাইলের বক্তব্য/বিবৃতি কিংবা জাতিকে আবারো বিভাজনের রাজনীতির দিকে ঠেলে দেওয়া উচিত নয়।’

‘আপনারা- সব দলের রাজনৈতিক নেতারা বলুন! গণতন্ত্র আর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথায় আর কতকাল এই দেশের জনগণকে রক্ত দিতে হবে? আর কতকাল এ দেশের মানুষকে জীবন দিতে হবে? আর কতকাল এ দেশে বিভাজনের রাজনীতি চলবে? আর কতকাল পরে এ দেশ পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে? কবে আপনারা ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন? কবে আপনারা এ দেশকে মানবিক মূল্যবোধের বাংলাদেশ বানাবেন? কবে আপনারা এ দেশের জনগণকে অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দেবেন? কবে আপনারা এ দেশের মানুষকে স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাধ উপলব্ধি করতে দিবেন? কবে আপনারা এ দেশে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করবেন? কবে?’

‘আমার মনে হয়, বিএনপির যেসব নেতা নতুন করে আবার দেশে বিভাজনের রাজনীতি শুরু করতে চাচ্ছেন, তারা মোটেও প্রজ্ঞার পরিচয় দিচ্ছেন না। সম্ভবত : বর্তমান অবস্থায় দেশের অনেক আসনে জামায়াতের শক্তিশালী প্রার্থী থাকায় ওই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কিছু নেতা তাদের নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য বিএনপির সাইনবোর্ড ব্যবহার করছে এবং একই সাথে বিএনপিকে বিপথে পরিচালিত করছে। দিনশেষে ওইসব নেতার এমন উদ্ভট কর্মকাণ্ড বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনাকেই শক্তিশালী করবে এবং ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা (আল্লাহ না করুন) আবার ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।’

‘বিএনপি-জামায়াতের মতো বৃহৎ দুটি দলের মাঝে কোনো অনৈক্য দেশবাসী আশা করে না। দেশের প্রয়োজনে এবং আমজনতার স্বপ্ন পূরণে বিএনপি জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধ- আপনারা প্লিজ ঐক্যবদ্ধ থাকুন। আপনারা ঐক্যবদ্ধ থেকে বাংলাদেশ থেকে ফ্যাসিবাদ-মুজিববাদকে চিরতরে নির্মূল করুন। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমৃদ্ধ এক সোনার বাংলা গড়ে তুলুন- এটাই জাতির প্রত্যাশা।’

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে