ঢাকা, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়ে ম্যাচ সেরা ও সিরিজ সেরা হলেন যারা

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ ডিসেম্বর ২০ ১০:২৭:৩০
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়ে ম্যাচ সেরা ও সিরিজ সেরা হলেন যারা

বাংলাদেশ তাদের টি২০ সিরিজের শেষ ম্যাচে ৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিয়েছে। আরনস ভেলের এই ম্যাচের জয়টি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে টি২০ ক্রিকেটে অন্যতম বড় সাফল্য। প্রায় দুই বছর পর বাংলাদেশ আবারও কোনো তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করল। এই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মাত্র ১০৯ রানে অলআউট করার পাশাপাশি এটি ছিল ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জয় (রানের ব্যবধানে)।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ২০ ওভারে ১৮৯/৭ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে। দলের ইনিংসের নায়ক ছিলেন জাকির আলি। তিনি ৪১ বলে ৭২ রানে অপরাজিত থাকেন, যেখানে ছিল ৬টি ছক্কা ও ৩টি চার। তার এই ইনিংসের বিশেষ মুহূর্ত ছিল শেষ ওভারে আলজারি জোসেফকে টানা তিন ছক্কা হাঁকানো, যা বাংলাদেশকে তাদের টি২০ ইতিহাসের সেরা শেষ ওভারের রান এনে দেয় (২৫ রান)।

জাকিরের ইনিংসটি নাটকীয়তায় ভরা ছিল। ১৮ রানে থাকা অবস্থায় ভুল বোঝাবুঝিতে তিনি রান-আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন। তবে তৃতীয় আম্পায়ার শামিম হোসেনকে আউট ঘোষণা করলে জাকির আবার ব্যাটিংয়ে ফেরেন। এরপর তিনি নিজের ভুলের শোধ তোলেন ক্যারিবিয়ান বোলারদের উপর ঝড় বইয়ে দিয়ে।

ওপেনিংয়ে ইনজুরিতে থাকা সৌম্য সরকারের পরিবর্তে নামা পারভেজ হোসেন ইমন দারুণ শুরু এনে দেন। ২১ বলে ৩৯ রানের ইনিংস খেলে তিনি দলের পাওয়ারপ্লেতে ৫৪ রান এনে দেন। ইমনের ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ২টি ছক্কা। লিটন দাস কিছুটা ধীরগতির ব্যাটিং করলেও ইমনের সঙ্গে তার জুটি দলের ভিত তৈরি করে দেয়।

১৯০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুরু থেকেই চাপে পড়ে। তাসকিন আহমেদ ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ব্র্যান্ডন কিংকে ফিরিয়ে দেন। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ ও লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের বিপর্যয়ে ফেলে দেন।

জোনসন চার্লস ও নিকোলাস পুরান কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়। পুরান ১৫ রান করে মেহেদীর বলে বোল্ড হন। এরপর রিশাদ হোসেন ক্যারিবিয়ানদের লেজের দিকটি দ্রুত গুটিয়ে দেন। তার বোলিং ফিগার ছিল ৩/২১। রোভম্যান পাওয়েল, গুডাকেশ মোতি ও আলজারি জোসেফসহ বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যান তার শিকারে পরিণত হন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ পর্যন্ত ১৬.৪ ওভারে মাত্র ১০৯ রানে অলআউট হয়, যা বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সর্বনিম্ন স্কোর।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে রিশাদ হোসেন ৩ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে সফল ছিলেন। মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাসকিন আহমেদ দুজনই ২টি করে উইকেট নেন। হাসান মাহমুদ ও তানজিম হাসান সাকিবও একটি করে উইকেট শিকার করেন।

মেহেদী হাসান: সিরিজ সেরা খেলোয়াড়ের প্রতিক্রিয়া

সিরিজ সেরা নির্বাচিত হয়ে মেহেদী হাসান বলেন,

"বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়া নিয়ে বলতে গেলে, সেসময় আমাদের হাতে অনেক বিকল্প এবং দলের কম্বিনেশন ছিল। সেই কারণেই আমি খেলতে পারিনি। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আসার আগে গ্লোবাল টি২০ লিগে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে আত্মবিশ্বাস পেয়েছি এবং এই সিরিজে তার প্রতিফলন ঘটেছে। এমন উইকেটে বল করতে দারুণ উপভোগ করেছি, কারণ বিশ্বকাপের সময় এই ধরনের টার্নিং, ধীরগতির এবং নিচু বাউন্সের উইকেট দেখেছি। সিরিজের আগে আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম উইকেট টু উইকেট বল করব এবং সঠিক লাইন-লেংথ ধরে রাখব। এ ধরনের উইকেটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বলের সঠিকতা।

"পুরানকে তিনবার আউট করতে পেরে ভালো লেগেছে। আমি পুরানকে আগে থেকেই চিনতাম, কারণ বিপিএলসহ আরও অনেক লিগে আমরা একসঙ্গে খেলেছি। জানি, ডানহাতি অফস্পিনারদের বিপক্ষে ওর সমস্যা রয়েছে। সেই পরিকল্পনা করেই তাকে আউট করেছি এবং সফল হয়েছি। পুরো দলই দুর্দান্ত খেলেছে। আমাদের টেস্ট এবং টি২০ সিরিজ ভালো কেটেছে, যদিও ওয়ানডে সিরিজটা ভালো যায়নি। তবে টি২০ সিরিজে ছেলেরা খুব ক্ষুধার্ত ছিল। আপনারা দেখেছেন, সিরিজজুড়ে আমাদের শরীরী ভাষা কতটা শক্তিশালী ছিল। আশা করি, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও ভালো করতে পারব।"

জাকির আলি: ম্যাচ সেরার প্রতিক্রিয়া

ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়ে জাকির আলি বলেন,

"আলহামদুলিল্লাহ (সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা)। এই সিরিজটা আমার জন্য অসাধারণ ছিল। টেস্ট সিরিজ, ওয়ানডে এবং টি২০ সব মিলিয়েই দারুণ কেটেছে। আজকের উইকেটটি আগের দুটি ম্যাচের তুলনায় অনেক ভালো ছিল। আমি নিজের জন্য সময় নিতে চেয়েছি এবং সেটাই করেছি। আমি জানি, যদি লম্বা সময় ক্রিজে থাকতে পারি তবে রান আসবেই।

(রানআউট নিয়ে)

"ওই রানআউটটা ছিল একেবারে বিভ্রান্তিকর। ড্রেসিং রুমে গিয়ে আমি নিজের ওপর রেগে গিয়েছিলাম, ব্যাট মারছিলাম, চারপাশে যা পেয়েছি তা-ই আঘাত করছিলাম। হঠাৎ তৃতীয় আম্পায়ার আমাকে আবার ডাকলেন। তারপর আমার কারণে আরেকটি রানআউট হলো। ওই মুহূর্তে আমি একদম ভেঙে পড়েছিলাম। তবে আলহামদুলিল্লাহ, আমি দলের জন্য খেলতে পেরেছি এবং রান করতে পেরেছি। শামীম ও মেহেদীর রানগুলোও যেন আমি তুলতে পেরেছি।

"এটা সবই মানসিকতার ব্যাপার। ক্যারিবিয়ান খেলোয়াড়রা সবসময় যে কোনো ফরম্যাটে শক্তভাবে ফিরে আসার চেষ্টা করে। বিশেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কন্ডিশনে খেলা সবসময় চ্যালেঞ্জিং। আমি এখানে আগের বিশ্বকাপে খেলেছিলাম, তখন ভালো খেলতে পারিনি। বাড়ি ফিরে এই সফরের জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ, এখন সবকিছু আমার পক্ষে যাচ্ছে।"

ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ পারফরমাররা

বাংলাদেশ ব্যাটিং:

জাকির আলি: ৭২* (৪১ বল, ৬ ছক্কা, ৩ চার)

পারভেজ হোসেন ইমন: ৩৯ (২১ বল, ২ ছক্কা, ৪ চার)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং:

রোমারিও শেফার্ড: ২/৩০

আলজারি জোসেফ: ২/৩৫

বাংলাদেশ বোলিং:

রিশাদ হোসেন: ৩/২১

মেহেদী হাসান: ২/১৩

তাসকিন আহমেদ: ২/৩০

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং:

রোমারিও শেফার্ড: ৩৩ (২২ বল, ২ ছক্কা, ২ চার)

জনসন চার্লস: ২৩ (১৮ বল, ৩ চার)

ম্যাচের সারসংক্ষেপ

বাংলাদেশ: ১৮৯/৭ (২০ ওভার) [জাকির ৭২*, ইমন ৩৯; শেফার্ড ২/৩০]

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১০৯ (১৬.৪ ওভার) [শেফার্ড ৩৩; রিশাদ ৩/২১, মেহেদী ২/১৩]

এই জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ আবারও প্রমাণ করল তাদের টি২০ ফরম্যাটের উন্নতির ধারা। পুরো সিরিজে দারুণ ব্যাটিং ও বোলিং পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল ছিল বাংলাদেশ।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে