ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১

সিরিয়ার স্বৈরশাসক কে এই বাশার আল-আসাদ, জেনেনিন তার সম্পর্কে নানা অজানা তথ্য

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ ডিসেম্বর ০৮ ১৬:৩২:১৮
সিরিয়ার স্বৈরশাসক কে এই বাশার আল-আসাদ, জেনেনিন তার সম্পর্কে নানা অজানা তথ্য

বাশার আল-আসাদ, আধুনিক সিরিয়ার আলোচিত ও বিতর্কিত এক নাম। প্রায় দুই যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকা এই নেতা এবং তার পরিবার প্রায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে সিরিয়ার শাসনক্ষমতা ধরে রেখেছেন। সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরি হিসেবে ক্ষমতায় আসেন বাশার। তার শাসনামলকে ঘিরে শুরু হয় রাজনৈতিক উত্তেজনা, যা গড়ায় রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে।

হাফেজ আল-আসাদ আধুনিক সিরিয়ার রূপকার হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৯৭১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিরিয়া শাসন করেন। তার আমলে সিরিয়ার অর্থনীতি উন্নত হয় এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে তার দক্ষতা প্রশংসিত হয়। তবে অনেকেই তাকে স্বৈরাচারী নেতা হিসেবে আখ্যা দেন। ২০০০ সালে তার মৃত্যু হলে বাশার আল-আসাদ ক্ষমতায় আসেন।

বাশার আল-আসাদের জন্ম ১৯৬৫ সালে, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে। তিনি দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তী সময়ে চক্ষু বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য লন্ডনে পড়াশোনা করেন। কিন্তু ১৯৯৪ সালে তার বড় ভাই বাসেল আল-আসাদের মৃত্যু হলে বাশারকে সিরিয়ায় ফিরে আসতে হয়। বাবার নির্দেশে তিনি সামরিক বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এবং রাজনীতিতে যোগ দেন।

২০০০ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হন বাশার আল-আসাদ। শুরুর দিকে তাকে একজন আধুনিক ও সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু ২০০৭ সালে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ক্ষমতাকে পোক্ত করতে দমনপীড়নের পথ বেছে নেন।

২০১১ সালে সিরিয়ার দেরা শহরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। বেকারত্ব, দুর্নীতি এবং বাক্‌স্বাধীনতার অভাবের মতো ইস্যুগুলোর কারণে সাধারণ মানুষ আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের জবাবে সরকারি বাহিনী প্রাণঘাতী হামলা চালালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। একপর্যায়ে বিরোধীরা সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করে, যা গড়ায় রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে।

১৩ বছরের এই যুদ্ধে সিরিয়ায় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠী উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। তবু আসাদ তার শাসন ধরে রাখতে সক্ষম হন।

গৃহযুদ্ধের সময় ইরান, রাশিয়া এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ আসাদের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে কাজ করেছে। এসময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য অভিযোগ উঠে আসে তার বিরুদ্ধে। রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার, কুর্দিদের ওপর দমনপীড়ন এবং জোরপূর্বক গুমের মতো অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়।

২০২৪ সালের সাজানো নির্বাচনে বাশার আল-আসাদ পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তবে এটি ছিল এক ধরনের আনুষ্ঠানিকতা, কারণ সবাই জানতেন যে নির্বাচনের ফল তার পক্ষে যাবে।

সম্প্রতি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহর আলেপ্পো ও হামার নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর হোমসসহ আরও কিছু শহরের দখল নেয় তারা। বিদ্রোহী নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি ঘোষণা দেন, তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করা। সাধারণ জনগণের সমর্থনে তারা রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

অবশেষে বাশার আল-আসাদ অজানা গন্তব্যে পালিয়ে যান। পলাতক এই নেতার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তার শাসনামল সিরিয়ার জন্য এক গভীর ক্ষতের মতো রয়ে গেছে।

বাশার আল-আসাদের শাসন সিরিয়ার ইতিহাসে এক বিতর্কিত অধ্যায়। আধুনিকতার মুখোশের আড়ালে স্বৈরতন্ত্র এবং দমনপীড়নের চর্চা তাকে এক নৃশংস শাসকের তালিকায় স্থান দিয়েছে। যদিও তার শাসনের পতন ঘটেছে, কিন্তু এই দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ সিরিয়াকে যে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে ফেলেছে, তা থেকে উত্তরণের পথ এখনো সুদূরপরাহত।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে