ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

ব্রেকিং নিউজ: বাজার থেকে হাওয়া সয়াবিন তেল

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ ডিসেম্বর ০৭ ১৮:১৬:০৫
ব্রেকিং নিউজ: বাজার থেকে হাওয়া সয়াবিন তেল

রাজধানীর কচুক্ষেত বাজারে শনিবার দুপুরে সয়াবিন তেল কিনতে গিয়ে এক ভোক্তা, রাকিবুল হাসান, পাঁচটি দোকান ঘুরে মাত্র একটি দোকানে দুই লিটারের বোতল পেয়েছেন, তবে সেটিও নির্ধারিত দামের চেয়ে ১৫ টাকা বেশি মূল্যে। তিনি বলেন, "আমি এক লিটারের বোতল চাইছিলাম, কিন্তু অনেক দোকান ঘুরেও তা পেলাম না। তাই বাধ্য হয়ে দুই লিটার কিনতে হয়েছে।" তার মতো অনেক ক্রেতাই এখন সয়াবিন তেলের সংকটের শিকার হয়ে পড়েছেন। রাজধানীর অন্যান্য বাজারেও একই পরিস্থিতি দেখা গেছে, যেখানে কিছু দোকানে তেল পাওয়া গেলেও দাম ছিল গায়ে লেখা মূল্যের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি।

বিক্রেতারা জানান, সয়াবিন তেলের তীব্র সংকটের কারণে তারা বাধ্য হয়ে খোলা তেল বিক্রি শুরু করেছেন। খুচরা বিক্রেতারা আরও জানান, বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে এবং এটি সামান্য কিছু কোম্পানি বাজারে সরবরাহ করছে, যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

টিসিবির (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) তথ্য অনুসারে, এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম বর্তমানে ১৬৫-১৬৮ টাকা এবং এক লিটার খোলা পাম তেলের দাম ১৫৮-১৫৯ টাকা। তবে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকটের কারণে দাম বেড়ে গেছে এবং সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে এর সমাধানে।

বিক্রেতাদের মতে, সয়াবিন তেলের সংকটের মূল কারণ হল ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বাজারে কম তেল সরবরাহ করা। তেল আমদানির জন্য সরকারের শুল্ক-কর কমানোর পরেও আমদানির পরিমাণ বাড়েনি। বিশেষ করে, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে আমদানিকারকরা অতিরিক্ত দামে তেল আমদানি করতে reluctant হয়ে পড়েছেন। এর ফলে বাজারে তেলের সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে, এবং আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক মাসে সয়াবিন তেলের দাম ৫০ ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে, সয়াবিন তেলের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে এবং তেল কোম্পানিগুলোও যথেষ্ট পরিমাণ সরবরাহ করতে পারছে না। সিটি গ্রুপের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, "বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম ৪০ শতাংশ বেড়েছে। যদিও সরকার শুল্ক কমিয়েছে, উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় দাম কমানো সম্ভব হয়নি।"

এদিকে, ক্রেতারা বিশেষ করে রমজান মাসকে সামনে রেখে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তাদের আশঙ্কা, অসাধু ব্যবসায়ীরা তেল মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে। রায়েবাজারের এক ক্রেতা, সাজ্জাদুল আলম বলেন, "এতগুলো দোকান খুঁজে তেল পেয়েছি, তবে দাম বেশি নিয়েছে। তেল না নিলে খাব কী?"

এ পরিস্থিতিতে সরকার ভোজ্যতেল সরবরাহ বাড়াতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিয়েছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাজার পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে যদি প্রশাসন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়। জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল বলেছেন, "সরবরাহকারীরা তেলের দাম কমানোর পরিবর্তে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তবে পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে।"

এ অবস্থায় অনেক ক্রেতা বাধ্য হয়ে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে তেল সংগ্রহ করছেন। রমজান মাসের আগে যদি সংকট পরিস্থিতি সমাধান না হয়, তবে সাধারণ মানুষের জন্য এ সংকট আরও তীব্র হতে পারে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে